প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সালাহউদ্দিন আহমদের প্রতিক্রিয়া

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের প্রতি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত জুলাই সনদ লঙ্ঘন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “সংবিধান সংস্কার পরিষদ সম্পূর্ণ নতুন ধারণা। এটি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

এদিন বিকেলেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস ঘোষণা দেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। তার ভাষায়, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোটের আয়োজন করা হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একসঙ্গে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে তা ব্যয়-সাশ্রয়ী হবে এবং নির্বাচনী পরিবেশ আরও উৎসবমুখর হবে।”

তিনি আরও জানান, গণভোটের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে উপযুক্ত সময়ে, যাতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত নয় মাসে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে—যা ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য আশার বার্তা বহন করে। এজন্য তিনি কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

ড. ইউনূস আরও উল্লেখ করেন, জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্ন ইতোমধ্যেই নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রশ্নটি হবে—আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫ এবং সেখানে উল্লেখিত সংশোধনীগুলোর প্রতি সম্মতি জানাচ্ছেন?”

প্রশ্নে অন্তর্ভুক্ত থাকবে চারটি মূল বিষয়:
(ক) নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী গঠন;
(খ) দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা, যেখানে ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ ভোটের অনুপাতে গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধনের জন্য উচ্চকক্ষের অনুমোদন বাধ্যতামূলক থাকবে;
(গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও কমিটির সভাপতির নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণসহ ৩০টি বিষয়ে ঐকমত্য বাস্তবায়ন;
(ঘ) জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন।

গণভোটে ভোটাররা এই চার বিষয়ের ওপর ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত প্রকাশ করবেন।

এদিকে, এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ”-এ স্বাক্ষর করেন বলে জানা গেছে।