ভারতের বিরুদ্ধে ৪৩ রোহিঙ্গাকে সাগরে ফেলার অভিযোগ, মানতে নারাজ দেশটির আদালত

ভারতীয় নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে ৪৩ জন রোহিঙ্গাকে ধরে জোর করে সাগরে ফেলে দেয়ার অভিযোগ মানতে রাজি নয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাতিসংঘের মানবাধিকার–সংক্রান্ত হাইকমিশনের অফিস (ওএইচসিএইচআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাগরে ফেলে দেয়ার কথা জানায়। এ নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছে।
এই দুই বিচারপতি বলেছেন, আবেদনে শক্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। এটি ভাসা-ভাসা। আবেদনকারীর উদ্দেশে বিচারপতিরা বলেন, দেশ যখন এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখনই আপনারা এই ধরনের বিষয়ের অবতারণা করছেন।
রোহিঙ্গাদের জোর করে সমুদ্রে ফেলে দেয়ার কারণে আদালতে রিট করেছিলেন প্রবীন মানবাধিকার আইনজীবী কলিন গনসালভেস। এজন্য তিনি আদালতের কাছে এটি শোনার আর্জি জানিয়েছিলেন।
জবাবে বিচারপতিরা বলেন, আবেদনে যেসব ফোনকলের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো যাচাই করাই হয়নি। এর আগে এমন ঘটনাও আদালতের নজরে এসেছে যে ঝাড়খন্ডের জামতাড়া থেকে ফোন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার নম্বর ব্যবহার করে। এখানে কি যাচাই করা হয়েছে যে ওই সব ফোনকল মিয়ানমার থেকেই করা হয়েছে?
সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা আবেদনকারীর উদ্দেশে বলেছেন, উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া এ ক্ষেত্রে আগের বৃহত্তর বেঞ্চের দেয়া রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি না। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে এই আবেদন চমৎকার ভাষায় রচিত এক গল্পগাথা ছাড়া আর কিছু নয়।
ওএইচসিএইচআরের বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ করে গতকাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা এই আবেদনে বলা হয়, নয়াদিল্লিতে শরণার্থী হিসেবে বাস করা ৪৩ জন রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কথা বলে গত ৬ মে এক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপর ৮ মে তাদের আন্দামানে নিয়ে সেখান থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে তাদের মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক জলসীমানায় গিয়ে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে জবরদস্তি সমুদ্রে নামিয়ে দেয়া হয়।
এই রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর–এ নিবন্ধিত ছিলেন। ফলে আইনজীবী গনসালভেস রোহিঙ্গা বিতাড়নে স্থগিতাদেশ চেয়ে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতে অনুরোধ করলে ডিভিশন বেঞ্চ তা অস্বীকার করেন।
এদিকে ওএইচসিএইচআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত সপ্তাহে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজ থেকে আন্দামান সাগরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নামিয়ে দেয়ার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন সামনে আসার পর জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ এ ঘটনাকে ‘অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে তদন্ত শুরু করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ভারত সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি নিষ্ঠুর ও প্রাণঘাতী আচরণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, বিশেষ করে তাদের মিয়ানমারের বিপজ্জনক অবস্থায় ফেরত পাঠানোর বিষয়ে।