ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কড়া প্রতিক্রিয়া মোদির

৭ আগস্ট ২০২৫ - ১১:২২ পূর্বাহ্ণ
 0
ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কড়া প্রতিক্রিয়া মোদির

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, দেশের কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় তিনি কোনো আপস করবেন না, যদি এর জন্য তাকে "চরম মূল্যও" দিতে হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন মোদি। 

এর আগে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা আগের ২৫ শতাংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোট ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর আরোপিত সর্বোচ্চ হারে পরিণত হয়েছে।

নয়াদিল্লির এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “আমাদের কাছে আমাদের কৃষকদের কল্যাণই সর্বোচ্চ আগ্রাধিকার পাবে। ভারত কখনও তার কৃষক, দুগ্ধ খাত ও মৎস্যজীবীদের কল্যাণের প্রশ্নে আপস করবে না। আমি জানি, এর জন্য আমাকে বড় মূল্য দিতে হতে পারে।”

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাঁচ দফা বাণিজ্য আলোচনা ভেস্তে গেছে মূলত ভারতীয় কৃষি ও দুগ্ধ খাতের বাজার উন্মুক্ত করার বিষয়ে মতপার্থক্য এবং রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ না করায়। তবে মোদি তার বক্তব্যে সরাসরি মার্কিন শুল্ক বা ব্যর্থ বাণিজ্য আলোচনার কথা উল্লেখ করেননি।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী, নতুন শুল্ক কার্যকর হবে ২৮ আগস্ট থেকে এবং এটি ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার "শাস্তিস্বরূপ ব্যবস্থা"। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তকে “চরম দুর্ভাগ্যজনক” বলে অভিহিত করেছে এবং জানিয়েছে যে, “জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেবে ভারত।”

তবে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা দেশ চীন এখনো এমন কোনো শুল্কের মুখে পড়েনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের বিরল খনিজ সম্পদের মতো কৌশলগত সম্পদের ওপর নির্ভরতা থাকায় বেইজিং আপাতত ছাড় পাচ্ছে, যা ভারতের নেই।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব দাম্মু রবি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক বৃদ্ধির পেছনে কোনও যৌক্তিকতা নেই। এটা সাময়িক একটি সমস্যা, আমরা নিশ্চিত বিশ্ব এর সমাধান খুঁজে পাবে। মনোভাবের দিক থেকে যেসব দেশ একমত, তারা পারস্পরিক উপকারে ভিত্তিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের খোঁজ করবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শুল্ক আরোপের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে ভারত এখন বিকল্প কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিকেও তাকাতে শুরু করেছে।

এই সংকটের মধ্যে মোদি সরকার বার্তা দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নতুন জোটের দিকে আগানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী মাসে সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীন সফরে যাচ্ছেন, যা সম্ভাব্য নতুন মিত্রতান্ত্রিক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত।

এদিকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বুধবার জানান, তিনি ট্রাম্পের শুল্ক মোকাবিলায় বিকাশমান অর্থনীতির জোট ব্রিকস সদস্যদের মধ্যে একটি আলোচনা শুরু করবেন। লুলা জানান, তিনি বৃহস্পতিবার মোদিকে ফোন করবেন এবং এরপর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ অন্যান্য ব্রিকস নেতাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেবেন।