নিয়মিত চশমা পরলেই কি চোখের পাওয়ার ঠিক হয়ে যায়?

চোখে চশমা ব্যবহার করা উচিত কিনা, কতদিন ব্যবহার করতে হবে, বা একবার ব্যবহার করলে কি সারাজীবনের জন্য সেটিই নির্ভরযোগ্য সমাধান—এই প্রশ্নগুলো প্রায় সবার মনে কখনো না কখনো এসেছে। চোখের যত্ন ও দৃষ্টিশক্তি নিয়ে যেসব বিভ্রান্তি রয়েছে, এবার তা পরিষ্কারভাবে জানা যাক।
আমরা চোখ দিয়েই দেখি ঠিক, তবে সেটির ব্যাখ্যা ও উপলব্ধি হয় মস্তিষ্কে। চোখ আসলে একটি রিসিভার বা দেখার যন্ত্র, আর আমাদের দেখা দৃশ্যের ব্যাখ্যা দেয় মস্তিষ্ক।
কীভাবে দেখি আমরা?
দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয় যখন কোনো বস্তুর ওপর আলো পড়ে তা প্রতিফলিত হয়ে চোখে প্রবেশ করে। চোখের ভেতরে থাকা রেটিনা সেই আলোকতরঙ্গ গ্রহণ করে তাকে ইলেকট্রিক সিগনালে রূপান্তর করে মস্তিষ্কে পাঠায়। মস্তিষ্ক সেই সংকেত অনুযায়ী বস্তুটিকে চিহ্নিত করে—এভাবেই ঘটে দেখার পূর্ণ প্রক্রিয়া। তবে চোখের ফোকাস যদি ঠিকমতো রেটিনায় না হয়, তখনই দেখা যায় ঝাপসা বা বিকৃত। এই অবস্থাকেই বলে রিফ্র্যাকটিভ এরর, যা মূলত দৃষ্টিসামস্যা।
সাধারণ দৃষ্টিসমস্যার প্রকারভেদ
???? দূরদৃষ্টি (Myopia)
এই সমস্যায় দূরের বস্তু পরিষ্কার দেখা যায় না। একে সংশোধনের জন্য মাইনাস পাওয়ারের লেন্স বা চশমা ব্যবহৃত হয়, যা ফোকাসকে পিছিয়ে রেটিনার উপর আনার কাজ করে।
???? ক্ষীণদৃষ্টি (Hypermetropia)
এই অবস্থায় দূরের পাশাপাশি কাছের জিনিস দেখতেও অসুবিধা হয়। প্লাস পাওয়ারের লেন্স ব্যবহারে ফোকাস সামনে এনে রেটিনায় সঠিকভাবে দৃশ্য ফোকাস হয়।
???? প্রেসবায়োপিয়া
চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে সাধারণত এই সমস্যা দেখা দেয়। এতে কাছের বস্তু, লেখা পড়া বা সূক্ষ্ম কাজ করতে অসুবিধা হয়। প্লাস পাওয়ারের চশমা এই সমস্যার সমাধান দেয়।
কেন হয় দৃষ্টিসমস্যা?
দৃষ্টিসমস্যার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে—
-
পারিবারিক বা জিনগত প্রভাব
-
নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠী বা বর্ণের মাঝে প্রবণতা
-
দীর্ঘ সময় ধরে কাছের কাজে মনোযোগ (পড়াশোনা, ছবি আঁকা)
-
পর্যাপ্ত সময় বাইরের আলোয় না থাকা বা খেলাধুলার অভাব
উপসর্গ যেগুলোতে সতর্ক হওয়া জরুরি
-
দূরের বস্তু ঝাপসা দেখা
-
শিশুদের কাছ থেকে টিভি দেখা বা বোর্ড না দেখা
-
দীর্ঘক্ষণ পড়তে গিয়ে চোখে চাপ বা মাথাব্যথা
-
চোখ জ্বালা, ঝাপসা দেখা বা চোখ থেকে পানি পড়া
চশমা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা
???? চশমা নিয়মিত পরলে চোখের পাওয়ার কমে যায়?
না। চশমা শুধু ফোকাস ঠিক করে দেয়, চোখের পাওয়ার নিজস্ব গতিতে বাড়ে বা কমে।
???? শাকসবজি বা ছোট মাছ না খেলে চোখের পাওয়ার বাড়ে?
ভুল। তবে ভিটামিন–এ সমৃদ্ধ খাবার রেটিনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
???? একবার চশমা পরলে আজীবনের জন্য পড়তেই হয়?
এটিও বিভ্রান্তি। বিশেষ করে শিশুদের দৃষ্টিসমস্যা চিহ্নিত হবার সঙ্গে সঙ্গে চশমা পরানো জরুরি। না হলে দৃষ্টিশক্তি বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং ‘অলস চোখ’ বা অ্যাম্বলিওপিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
চশমা ব্যবহারের কিছু সঠিক নিয়ম
-
একসঙ্গে নতুন ও পুরোনো পাওয়ারের চশমা ব্যবহার নয়
-
চোখ অভ্যস্ত হতে সময় নেবে, নিয়মিত ব্যবহারেই উপকার
-
বাইফোকাল বা প্রগ্রেসিভ লেন্সের ক্ষেত্রে ব্যবহার-পদ্ধতি বুঝে নিতে হবে
-
ফ্রেম ও লেন্সের মাপ ঠিক না হলে প্রাথমিক অস্বস্তি হতে পারে, যা কয়েক সপ্তাহে ঠিক হয়ে যায়
সঠিক ফ্রেম নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত?
-
ফ্রেম যেন মুখাবয়বের সঙ্গে মানানসই হয়
-
ভারী রিম নয়; বিশেষ করে শিশু বা হালকা ব্যবহারের জন্য হালকা ফ্রেম উত্তম
-
বাইফোকাল বা প্রগ্রেসিভ লেন্সের ক্ষেত্রে একটু বড় রিম ব্যবহারই ভালো
-
ফ্রেম যেন নাক ও কানের পাশে চাপে না বসে
চশমার বিকল্প কি ল্যাসিক?
ল্যাসিক (LASIK) হলো এক ধরনের লেজারচিকিৎসা, যেখানে কর্নিয়ার বক্রতা পরিবর্তন করে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা হয়। তবে এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয় এবং কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, যেমন—ড্রাই আই বা দীর্ঘ মেয়াদি চোখের শুষ্কতা। অনেক ক্ষেত্রেই আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ড্রপ দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে হয়।
বিশেষজ্ঞ মতামত:
অধ্যাপক ডা. মো. ছায়েদুল হক,
বিভাগীয় প্রধান,
মার্কস মেডিকেল কলেজ, মিরপুর, ঢাকা