ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, ‘বহিষ্কার না উঠলে আন্দোলন থামবে না’

ঢাকার নতুনবাজারে সড়ক অবরোধ করে চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। ‘অন্যায়’ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী তারেক রহমান বলেন, “আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা পিছু হটছি না। সরকারের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে সন্ধ্যায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
আন্দোলনকারীদের ৫ দফা প্রধান দাবি:
১. যেসব শিক্ষার্থী ‘অন্যায্যভাবে’ বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের বহিষ্কারাদেশ শর্তহীনভাবে বাতিল করতে হবে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. বহিষ্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. প্রতিষ্ঠানে চলমান অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার বিরুদ্ধে যেসব সংস্কার দাবি শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৫. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫% হারে কর অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
শনিবার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ‘নতুনবাজার ব্লকেড’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা সড়কের এক পাশে অবস্থান নেন, ফলে যান চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। যানজটে দীর্ঘসময় আটকে থাকায় সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।
দীর্ঘ সময় ধরে বাসে আটকে থাকা যাত্রী সাহেদ জানান, “প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি, প্রচণ্ড গরমে কষ্ট সহ্য করা যাচ্ছে না।”
একইভাবে তুরাগ পরিবহনের হেলপার সুমন বলেন, “তিন ঘণ্টা ধরে আটকে আছি, এমন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া কঠিন।”
ভাটারা থানার ওসি রাকিবুল হাসান জানান, “শিক্ষার্থীরা সড়কের একপাশে অবস্থান নেওয়ায় কুড়িল থেকে বাড্ডাগামী রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।”
প্রায় পঞ্চাশজন শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত হন। স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিল— ‘হয় বহিষ্কার বাদ যাবে, না হয় আমার লাশ যাবে’, ‘প্রত্যাহার বহিষ্কার, তারপর হবে সংস্কার’, ‘অথরিটি স্বৈরাচার, এবার তোরা গদি ছাড়’, ‘প্রাইভেট খাতে শিক্ষাকর, করতে হবে প্রত্যাহার’ এবং ‘প্রাইভেট সব মাঠে থাক, সিন্ডিকেট নিপাত যাক’।
পুলিশ দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে সড়ক ফাঁকা করতে উদ্যোগ নিলেও শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান বজায় রাখেন। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ দাবি করেন, পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ৮-৯ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪-৫ জন নারী।
পূর্বপটভূমিতে জানা যায়, ২৬ ও ২৭ এপ্রিল ইউআইইউ-তে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে উপাচার্যসহ ২৪ জন ডিন, বিভাগীয় প্রধান এবং পরিচালক পদত্যাগ করেন। পরদিন, ২৮ এপ্রিল, বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পরবর্তীতে, ২০ মে থেকে অনলাইন ক্লাস চালু হলেও অনেক শিক্ষার্থী সরাসরি ক্লাস চালু ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার দাবি জানিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ২ জুন প্রশাসন ৪১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, যাদের মধ্যে ২৬ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট লাবিব মুহান্নাদ বলেন, “জুলাই মাসে যেসব শিক্ষার্থী অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটি। ইউনাইটেড গ্রুপ ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে যুক্ত, আর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলোই প্রশ্নের মুখে ফেলে। আন্দোলন দমাতে গিয়ে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের মুক্তি চাই আমরা।”