ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে তেলের বাজারে স্বস্তির হাওয়া

২১ জুন ২০২৫ - ০৯:৫০ পূর্বাহ্ণ
 0
ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে তেলের বাজারে স্বস্তির হাওয়া

যুক্তরাষ্ট্র ইরানবিষয়ক নতুন নিষেধাজ্ঞা দিলেও এতে যুদ্ধ নয়, বরং কূটনৈতিক সমাধানের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা কিছুটা কমেছে, আর তার প্রভাব পড়েছে তেলের বাজারে, দাম কমে এসেছে কয়েক ধাপ। শুক্রবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ৮৪ ডলার কমে দাঁড়ায় ৭৭ দশমিক ১ ডলারে, যা আগের তুলনায় ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ হ্রাস। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) ব্যারেলপ্রতি ২১ সেন্ট কমে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৯৩ ডলার। তবে আগস্ট মাসের বেশি তরল চুক্তি নির্ধারিত হয়েছে ৭৩ দশমিক ৮৪ ডলারে। এক সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মার্কিন ফিউচার মূল্য বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দাম কমার প্রবণতা খুব স্থায়ী না–ও হতে পারে। ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের কারণে তেলের বাজার অত্যন্ত অস্থির। এই অস্থিরতা চলমান থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার তেলের দাম এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়, কিন্তু শুক্রবার সকালে তা আবার হঠাৎ কমে আসে। শনিবারও সেই ধারা অব্যাহত আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ জানায়, নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে হংকংভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ২০টি সংস্থা, পাঁচজন ব্যক্তি এবং তিনটি জাহাজ। নিউ ইয়র্কভিত্তিক বিশ্লেষক জন কিলডাফ এই বিষয়ে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র চাপ প্রয়োগ নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার ইঙ্গিতও বহন করে। এগুলোর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ নয়, কূটনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান চাইছে।

বৃহস্পতিবার যখন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় তখন প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে যায় তেলের দাম। পাল্টা জবাবে ইরান, ইসরায়েলে অবস্থিত ওপেকের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদকের দিকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। সপ্তাহব্যাপী এই সংঘাতে এখনো কোনো পক্ষ পিছু হটার ইঙ্গিত দেয়নি।

তবে পরে হোয়াইট হাউজের এক ঘোষণায় জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবেন। এই খবরে ব্রেন্টের দাম আবার কিছুটা নেমে আসে।

ট্রাডু ডটকমের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক রাসেল শোর বলেন, “যুদ্ধ এখনো বড় ধরনের রূপ নেয়নি, কিন্তু অঞ্চল থেকে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েই গেছে—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের সম্ভাবনার ওপর তা নির্ভর করছে।”

তেলের বাজার নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন পিভিএম অ্যানালিস্ট জন ইভান্স। তিনি বলেন, “যখন ইরান ও ইসরায়েল একে অপরকে আঘাত করতে থাকে, তখন অনিচ্ছাকৃত কোনো হামলায় সংঘাত বাড়তে পারে—যা তেল অবকাঠামোতেও প্রভাব ফেলতে পারে।”

ইরান এর আগেও হুমকি দিয়েছিল, পারস্য উপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ চোকপয়েন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে—যা মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিশ্ববাজারে তেল রপ্তানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রুট।

তবে এখন পর্যন্ত তেল রপ্তানি ব্যাহত হয়নি এবং বাজারে সরবরাহ ঘাটতিও দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভান্নি স্তাউনোভো। তিনি বলেন, “এখান থেকে তেলের দাম কোন দিকে যাবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সরবরাহ বিঘ্নিত হবে কি না তার ওপর।”

প্যানমিউর লিবারামের বিশ্লেষক অ্যাশলে কেল্টি সতর্ক করে বলেন, “যদি ইসরায়েল ইরানের তেল অবকাঠামোতে আঘাত হানে কিংবা ইরান হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে তেলের দাম ১০০ ডলার পর্যন্ত উঠে যেতে পারে।”

এদিকে, ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের মূল্যসীমা ৪৫ ডলারে নামিয়ে আনার প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে।

মার্কিন জ্বালানি সংস্থাগুলি এই সপ্তাহে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের পর প্রথমবারের মতো টানা অষ্টম সপ্তাহের জন্য তেল ও গ্যাস উত্তোলনে ব্যবহৃত রিগের সংখ্যা কমেছে। জ্বালানি পরিষেবা সংস্থা বেকার হিউজেস (BKR.O) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

ভবিষ্যতের উৎপাদনের প্রাথমিক সূচক, তেল ও গ্যাস রিগের সংখ্যা ২০ জুন পর্যন্ত সপ্তাহে কমে ৫৫৪-এ দাঁড়িয়েছে, যা ২০২১ সালের নভেম্বরের পর সর্বনিম্ন।