ধানমন্ডিতে ডাকাতি: লক্ষ্য ছিল জুয়েলার্সে লুকিয়ে রাখা সোনা

২৮ মার্চ ২০২৫ - ০৮:০৮ পূর্বাহ্ণ
 0
ধানমন্ডিতে ডাকাতি: লক্ষ্য ছিল জুয়েলার্সে লুকিয়ে রাখা সোনা

রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনাটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। অপরাধীরা ঘটনাস্থলে সংঘবদ্ধভাবে একত্রিত হয়েছিল। যেখানে কিছু লোক র‍্যাব সদস্য, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সোর্স, ম্যাজিস্ট্রেট এবং এমনকি ছাত্র প্রতিনিধির ছদ্মবেশ ধারণ করে।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দাবি, আসামিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল- ধানমন্ডির ওই জুয়েলারি ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন ভবন থেকে বিপুল পরিমাণ সোনা ও নগদ টাকা লুট করা। যা সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে বলে তাদের ধারণা ছিল।

গত বুধবার (২৬ মার্চ) ভোর চাটার দিকে প্রায় ২৫-৩০ জনের একটি দল ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কের ছয়তলা ভবনে হানা দেয়। এটি ছিল অলংকার নিকেতন জুয়েলার্সের মালিক এম এ হান্নানের ভবন। ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা মামলার তথ্যানুযায়ী, ডাকাতরা মোট ৩৬.৫ লাখ টাকা ও ২.৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে জানান, তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক, সোর্স ও ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে ভবনে প্রবেশ করে এবং অভিযানের নামে লুটপাট চালায়। 

এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যার মধ্যে একজন সেনা সার্জেন্টও রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সেনা সার্জেন্ট ফারহাদ বিন মোশাররফ (৩৩), ইয়াসিন হাসান (২২), মোবাসের আহমেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), আবদুল্লাহ (৩২) ও সুমন (২৯)। তাদের মধ্যে প্রথম চারজনকে ঘটনাস্থল থেকে এবং বাকি দুইজনকে গতকাল ভোরে হজরতবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিসি মাসুদ আরও জানান, গত বছরের আগস্টে ওই দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছিল এবং সেই ঘটনায় তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করা হয়।

তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, এই ডাকাতির সঙ্গে আগের চুরির কোনো যোগসূত্র আছে কিনা বা দোকানের কোনো কর্মচারী এতে জড়িত ছিল কিনা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান জানান, প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে যে, ডাকাত দলের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল চার থেকে পাঁচজন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অন্তত তিনজন নিজেদেরকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে দাবি করেছে, যা পুলিশ যাচাই করে দেখছে।

গ্রেপ্তারকৃত ওয়াকিল তদন্তকারীদের জানান, তিনি এবং আরেকজন অভিযুক্ত সেহরির জন্য ধানমন্ডিতে গিয়েছিলেন, তখন তাদের এক পরিচিত ব্যক্তি ‘ছাত্র প্রতিনিধি’ হিসেবে অভিযানে যোগ দিতে বলেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, প্রথমে তারা ভবন থেকে বিশাল পরিমাণ সোনা ও টাকা লুট করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু প্রত্যাশিত সোনা না পেয়ে, তারা এসএম সোর্সিং নামে একটি কেনাবেচা প্রতিষ্ঠানের অফিস ভাঙচুর করে এবং সেখান থেকে ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে যায়। এরপরও তারা প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়ায়, ভবন মালিক হান্নানকে অপহরণের পরিকল্পনা করে।

তারা মুক্তিপণের জন্য হান্নানকে অপহরণ করতে চেয়েছিল। তবে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের উপস্থিতিতে তারা ব্যর্থ হয় বলেন জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এ সময় আশেপাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছয়জন নিরাপত্তারক্ষী পুলিশের সহায়তা করেন এবং চারজন ডাকাতকে আটক করেন।

পরবর্তীকালে এই সাহসিকতার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ তাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কৃত করে এবং তাদেরকে সহায়ক বাহিনীতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- স্বপন ভূঁইয়া (২৫), বিজয় (৪০), রিয়াজুল ইসলাম (৩৪), দেলোয়ার হোসেন (২০), সিয়াম (১৮) এবং টনি (২০)।