বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন রহস্যময় দেশ এবার দরজা খুলে দিলো পর্যটকদের জন্য

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র তুর্কমিনিস্তান এতদিন ছিল বিশ্বের অন্যতম বিচ্ছিন্ন এবং রহস্যময় একটি দেশ। তবে দেশটির সরকার সম্প্রতি ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার ঘোষণা দেয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠেছেন পর্যটকরা। যদিও নতুন এই নিয়মের ঘোষণা এসেছে গত এপ্রিলে, এখনো এর বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট সময় জানানো হয়নি।
দেশটির সবচেয়ে আলোচিত পর্যটন আকর্ষণ ‘দারভাজা গ্যাস ক্রেটার’, যা ‘নরকের দরজা’ নামেও পরিচিত। সোভিয়েত আমলে দুর্ঘটনাবশত সৃষ্টি হওয়া এই গর্তে এখনো আগুন জ্বলছে, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমে এসেছে। আশগাবাত থেকে প্রায় চার ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত এই গন্তব্যে পর্যটকরা ইয়ুর্ট ক্যাম্পে রাত কাটিয়ে আগুনের শিখা ও স্ফুলিঙ্গ উপভোগ করেন।
এ ছাড়া সিল্ক রোডের ঐতিহাসিক শহর, কুনিয়া-উরগেনচের মিনার ও সমাধিসৌধ, মেরভের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ এবং আশগাবাত শহরের সাদা মার্বেলের অদ্ভুত স্থাপত্যগুলোও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। তেল ও গ্যাস মন্ত্রণালয়ের লাইটার আকৃতির ভবন কিংবা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইনডোর ফেরিস হুইল শহরটিকে দিয়েছে অনন্য এক পরিচিতি।
নরওয়ের লেখক ও নৃতত্ত্ববিদ এরিকা ফ্যাটল্যান্ড আশগাবাতকে বর্ণনা করেছেন ‘একটি ভুতুড়ে সাদা রাজপ্রাসাদের মতো শহর’ হিসেবে।
বহির্বিশ্ব থেকে তুর্কমিনিস্তানের এই বিচ্ছিন্নতা শুরু হয় ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর। প্রথম প্রেসিডেন্ট সাপারমুরাত নিয়াজভ সোভিয়েত যুগের প্রভাব বজায় রেখে একনায়কতান্ত্রিক শাসন কায়েম করেন। দেশটির বিপুল গ্যাস সম্পদ বিদেশি সহায়তা ছাড়াই টিকে থাকতে সহায়ক ছিল। তার মৃত্যুর পরও দেশটির নীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি।
তবে সাম্প্রতিক এক দশকে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে তুর্কমিনিস্তান। এই সংকট মোকাবিলায় দেশটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে মনোযোগী হচ্ছে। ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে গ্যাস চুক্তি এবং পর্যটন খাত উন্মুক্ত করাও সেই কৌশলের অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
প্রতিবেশী উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান ইতোমধ্যে পর্যটনের ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। তাদের পথ ধরেই তুর্কমিনিস্তান বুঝতে পারছে, এখন সময় এসেছে নিজেদের উন্মুক্ত করার। ভবিষ্যতে ভিসা নীতিতে আরও শিথিলতা এলে, বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় এই দেশটি সাধারণ পর্যটকদের জন্য বাস্তবেই উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারে।