চোখের স্ট্রোক কী, কেন হয় ও হলে করণীয় কী?

স্ট্রোক শব্দ শোনার পর অধিকাংশ মানুষই ব্রেন বা মস্তিষ্কের জটিলতা মনে করেন। অনেকেই আবার হিটস্ট্রোক শব্দের সঙ্গে পরিচিত। তীব্র দহনে হিটস্ট্রোক হয়। যা থেকে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার গরমের তীব্রতার কারণে যদি শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তখন এ থেকে চোখের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কখনো দৃষ্টিশক্তি যদি হারিয়ে যায় বা শুধু একটি চোখে আংশিক দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং এ জন্য কোনো ব্যথা না থাকে, তাহলে চোখের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার রেটিনাল ধমনীতে বাধাও পড়তে পারে। এ অবস্থায় চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া জরুরি। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক অর্গানাইজেশন। তাহলে এ বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।
চোখের স্ট্রোক কেমন:
চোখের রেটিনা হচ্ছে সেই অংশ, যা মস্তিষ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোকে ছবিতে পরিণত করে। আর রেটিনাল ধমনীতে বাধাপ্রাপ্তের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে এর রকমারি নাম থাকতে পারে। রেটিনা ধমনীতে ব্লকেজের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে-
সেন্ট্রাল রেটিনাল ধমনী অক্লুশন: চোখের প্রধান ধমনীতে বাধা সৃষ্টি করে, যা গাছের গুঁড়ির মতো। এটি হলে পুরো চোখজুড়ে এর প্রভাব বুঝতে পারা যায়।
ব্রাঞ্চ রেটিনাল ধমনী অক্লুশন: এটি চোখের ছোট ধমনীর একটি বাধা বোঝায়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারেন, একটি গাছের কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত একটি শাখা। ধমনীতে এই ব্লকেজের প্রভাব চোখের একটি ছোট অংশে দৃশ্যমান হয়।
টুইগ রেটিনাল ধমনী অক্লুশন: এটি হচ্ছে ধমনীর ছোট রক্তনালীকে বাধা প্রদান করা। এটি শাখার মতো হতে পারে। এই সমস্যা হলে রেটিনার একটি অংশে দৃষ্টি হারানোর সমস্যা হতে পারে।
চোখের স্ট্রোকের লক্ষণগুলোয় সাধারণত ব্যথা থাকে না। প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হচ্ছে সাধারণত হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া বা এক চোখের দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন। এছাড়াও কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন- ভাসমান ও ঝাপসা দৃষ্টি, হালকা বা অন্ধকার দেখা। দৃষ্টি পরিবর্তন, যা ছোট থেকে শুরু হয় কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ খারাপ হতে তাকে।
স্ট্রোকের কারণ:
চোখের রেটিনায় রক্ত প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার কারণেই মূলত চোখের স্ট্রোক হয়। ধমনীতে শক্ত কিছুর কারণে বাধা পড়তে পারে। যেমন- প্লাক বা সংক্রমণ, যা শরীরের অন্য অংশ থেকে ভেঙে যায়। আপনার হৃদপিণ্ডের ভেতরের অংশ বা অন্য কোনো ধমনী। এ ধরনের ব্লকেজকে এমবোলিজম বলা হয়।
রক্ত ঘন হওয়া ও জমাট বাঁধার কারণেও ধমনীতে এই বাধা হতে পারে। এ ধরনের বাধাকে ধ্রম্বোসিস বলা হয়। এসব বাধাগুলোর কারণে তরল পদার্থ বেরিয়ে যায় এবং চোখের চাপ (দৃষ্টি বা চোখকে বোঝায়) বৃদ্ধি পায়। যা গ্লুকমোর ক্ষেত্রে অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে।
চোখ স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকির কারণগুলো:
উচ্চ কোলেস্টেরল (হাইপারলিপিডেসিয়া) থাকা, রক্তনালীতে প্লাক জমে থাকা (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস), করোনারি ধমনীর রোগে আক্রান্ত, বয়স ৬০-এর বেশি হওয়া ইত্যাদি কারণ।
রোগ নির্ণয় ও পরীক্ষা:
হঠাৎ এক চোখের সম্পূর্ণ বা আংশিক দৃষ্টিশক্তি হারানো হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া আপনার শারীরিক চিকিৎসার অতীত সম্পর্কে পর্যালোচনা করুন এবং লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানুন। সম্পূর্ণ চোখ পরীক্ষা করান। এর মধ্যে ফান্ডোস্কোপি (চক্ষুরোগ) রয়েছে।
ফ্লুরোসিন অ্যাঞ্জিওগ্রাফি পরীক্ষা করুন। এ ধরনের পরীক্ষায় একটি বিশেষ রঞ্জক ব্যবহার করা হয়। যা আপনার চোখে রক্ত প্রবাহের ধরণ তুলে ধরে। রঙিন ফান্ডাস ফটোগ্রাফি পরীক্ষা করাতে পারেন। এ পরীক্ষায় ফান্ডাসের ছবি পাওয়া যায়। যা চোখের সেই অংশ, যেখানে রেটিনা থাকে। অপটিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফিও পরীক্ষা করাতে পারেন। তবে এসব পরীক্ষা বা এর বাইরে যেকোনো সিদ্ধান্তই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে।
করণীয়:
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা, ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে হবে। ধূমপান বাদ দেয়া, রক্তচাপ, রক্তের কোলেস্টেরল ও চোখের চাপের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে।