চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেলে প্রতিদিন লোকসান ২৭ লাখ টাকা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ বা টানেল দিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬৬টি গাড়ি কম চলাচল করেছে। এতে প্রতিদিন টানেল থেকে গড়ে আয় হয়েছে ১০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। তবে টানেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে দৈনিক ব্যয় হয় ৩৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। দৈনিক আয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। দৈনিক ঘাটতি প্রায় ২৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
কর্ণফুলী টানেলের সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, ২০২০ সালে টানেল চালু হলে দিনে ২০ হাজার ৭১৯টি যানবাহন চলবে। টানেল চালু হয়েছে ২০২৩ সালের অক্টোবরে। পরে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এই প্রক্ষেপণ কমিয়ে ২০২৪ সালে প্রতিদিন গড়ে ১৮ হাজার ৪৮৫টি গাড়ি চলার পূর্বাভাস দেয়। আর ২০২৫ সালে যানবাহন চলেছে ১৯ হাজার ৬৬৯টি। টানেল চালুর ২১ মাস পার হতে চললেও এখনো এক দিনের জন্যও পূর্বাভাস অনুযায়ী গাড়ি চলাচল করেনি।
গত ২৮ জুন চট্টগ্রামে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, টানেল চালু হওয়ার পর এখন রক্ষণাবেক্ষণ খরচও উঠছে না। টানেল চালু রাখতে প্রতিদিন লোকসান দিতে হচ্ছে। নির্মাণের আগে পরিকল্পনা করা দরকার ছিল।
টানেল দিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী কেন গাড়ি চলছে না, তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি টানেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীরা। সেতু কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর চালু না হওয়া, আনোয়ারা প্রান্তে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গাড়ি চলাচল করছে না।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, টানেল থেকে এখন পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে আয় হয়েছে ১০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। তবে টানেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে দৈনিক ব্যয় হয় ৩৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। দৈনিক আয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। দৈনিক ঘাটতি প্রায় ২৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। চালুর পর ব্যয় হয়েছে ২৫৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত লোকসান ১৯১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মতে, এই অর্থবছরে টানেল থেকে আয় হতে পারে ৩৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর ব্যয় হবে ২০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে, টানেলের ভেতর দিয়ে সবচেয়ে বেশি চলাচল করছে হালকা যানবাহন (কার, জিপ, পিকআপ, মাইক্রোবাস)। এর পরিমাণ ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪০টি, যা মোট গাড়ির ৭৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, চালুর প্রথম পাঁচ বছর টানেল সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবহার হবে না। এটির পরিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য মিরসরাই শিল্পনগর থেকে আনোয়ারা-বাঁশখালী হয়ে পেকুয়া মাতারবাড়ী কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করতে হবে। এই এলাকাজুড়ে শিল্পায়ন, পর্যটন ও আবাসন এলাকা গড়ে উঠতে সময় লাগবে। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে ও মিরসরাই শিল্পাঞ্চল চালু হলে আরও বাড়বে টানেলের ব্যবহার।