উত্তরায় বিধ্বস্ত এফ-৭ বিজিআই, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা সম্পর্কে যা জানা গেল

২১ জুলাই ২০২৫ - ১৪:৪২ অপরাহ্ণ
 0
উত্তরায় বিধ্বস্ত এফ-৭ বিজিআই, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা সম্পর্কে যা জানা গেল

রাজধানীর উত্তরায় সোমবার (২১ জুলাই) বিধ্বস্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ ও স্বল্পমাত্রার যুদ্ধ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দুর্ঘটনার পরই প্রশ্ন উঠেছে-এই যুদ্ধবিমান কারা তৈরি করেছে? তাদের বর্তমান অবস্থা কী? তারা এখনো কি যুদ্ধবিমান নির্মাণ করেন? চলুন দেখে নেয়া যাক।

এফ-৭ বিজিআই হচ্ছে চীনের তৈরি একটি উন্নত সংস্করণের যুদ্ধবিমান, যা মূলত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মিগ-২১ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। ২০১১ সালে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এমন ১৬টি যুদ্ধবিমান সরবরাহের জন্য চুক্তি সই হয়। ২০১৩ সাল নাগাদ এই যুদ্ধবিমান হস্তান্তর সম্পন্ন হয়। এসব বিমানে অত্যাধুনিক ককপিট, মাল্টি-ফাংশনাল ডিসপ্লে, শক্তিশালী ফায়ার কন্ট্রোল রাডার এবং প্রশিক্ষণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা সংযুক্ত রয়েছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন (সিএসি) এই যুদ্ধবিমানটি নির্মাণ করেছে- যা দেশটির অন্যতম প্রধান বিমাননির্মাতা সংস্থা। এই প্রতিষ্ঠানটি চীনের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন অব চায়না (এভিক)-এর অধীন কাজ করে।

সিএসি মূলত সামরিক যুদ্ধবিমান উৎপাদনের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। চীনের অসংখ্য মডেলের ফাইটার জেট (যুদ্ধবিমান) এবং উন্নত ট্রেইনার জেট তাদের হাতে তৈরি। তবে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে এই সিরিজের সবচেয়ে আধুনিক মডেলের যুদ্ধবিমান সরবরাহের পর চীন এই সিরিজের উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে।

দেশে এই মডেলের যু্দ্ধবিমানের এটি তৃতীয় দুর্ঘটনা। এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরে টাঙ্গাইলের মধুপুরের রসুলপুর ফায়ারিং রেঞ্জে মহড়ার সময় বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপু প্রাণ হারান। এরপর ২০২১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ এমবি। এ সময় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ প্রাণ হারান।

চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন এখনও সক্রিয়ভাবে যুদ্ধবিমান তৈরি করছে এবং তারা বর্তমানে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার জেটও উৎপাদন করছে। তাদের সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হলো: চেংদু জে-১০সি আধুনিক মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি।

চেংদু জে-২০সি চীনের প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান, যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ ও এফ-৩৫–এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত।এছাড়াও বেসামরিক বিমান এবং ইউএভি ( মনুষ্যহীন ড্রোন) উৎপাদনেও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এফ-৭ সিরিজের নিরাপত্তা নিয়ে সময়ে সময়েই প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এই মডেলের যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও এটি পুরোনো প্রযুক্তিনির্ভর, তবে কিছু দেশ সীমিত বাজেট ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজনে এখনো এটি ব্যবহার করছে।

উত্তরার দুর্ঘটনার পর এফ-৭ বিজিআই মডেলটির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান এটি তৈরি করেছে, সেই চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন বর্তমানে চীনের সামরিক বিমান প্রযুক্তির শীর্ষে রয়েছে। তবে পুরোনো মডেলের বিমানগুলো কতটা নিরাপদ এবং কার্যকর তা নিয়ে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ভাবনার সময় এসেছে।

বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর মোট ৩৬টি এফ-৭ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই এফ-৭ বিজিআই ধরনের। তবে এফ-৭ এমবি এবং এফটি-৭ মডেলেও রয়েছে। তবে মোট ফাইটার ভেরিয়েন্ট রয়েছে ৩৬টি।