শুল্ক যুদ্ধে জিততে চাইলে ট্রাম্পকে যেভাবে খেসারত দিতে হবে

১ আগস্ট ২০২৫ - ১৩:৩১ অপরাহ্ণ
 0
শুল্ক যুদ্ধে জিততে চাইলে ট্রাম্পকে যেভাবে খেসারত দিতে হবে

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বকে হতবাক করে দিয়ে আমদানি পণ্যে ব্যাপক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন-যা তৎক্ষণাৎ বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তবে সেই সব শুল্কের বেশিরভাগই পরে স্থগিত করা হয়। চার মাস পর, ট্রাম্প নিজেকে বিজয়ী দাবি করছেন। তিনি বলছেন, তিনি একাধিক দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছেন এবং একতরফাভাবে অন্যদের ওপর শুল্ক বসিয়েছেন। আর সবকিছুই সেরেছেন অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়াই।

শুল্ক বাড়িয়ে কী চাইছেন ট্রাম্প? এমন প্রশ্নে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র নতুনভাবে ব্যাপকহারে রাজস্ব পাবে, দেশে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে এবং বিদেশ থেকে শত শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আদায় করা পাশাপাশি বিদেশি পণ্যও কেনা হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানান, এতে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সাময়িকভাবে লাভবান হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কাই বেশি।

‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তির’ প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতায় এটি ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং। শুক্রবার (১ আগস্ট) ছিল এক ভয়ঙ্কর সময়সীমা। এই সময়ের মধ্যে যদি কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের ওপর ভয়াবহ শুল্ক বসবে ওয়াশিংটন-এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে, জুলাইয়ের শেষে এসে মাত্র ১২টি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। তাও এক-দুই পাতার ছোট চুক্তি।

যুক্তরাজ্য ছিল প্রথম চুক্তি সইকারী দেশ, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি কম। যুক্তরাজ্যের পণ্যের ওপর গড় শুল্ক ১০ শতাংশ হলেও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মতো দেশগুলোকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে।
 বিশ্বব্যাপী কে লাভবান, কে ক্ষতিগ্রস্ত: ভারতের কিছু পণ্যে ২৫ শতাংশের বেশি শুল্ক পড়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ভারতের জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। ফলে তাৎক্ষণিক বড় ক্ষতি হবে না।যুক্তরাষ্ট্র যদি জার্মানি থেকে আমদানি করা গাড়ির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক বসায়, তাহলে এর ফলে জার্মানির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ০.৫ শতাংশ কমে যেতে পারে।

কারণ, জার্মানির অর্থনীতিতে গাড়ি রপ্তানি বড় ভূমিকা রাখে, আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের অন্যতম বড় ক্রেতা। শুল্ক বাড়লে রপ্তানি কমে যাবে, ফলে আয়ও কমবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই পরিস্থিতি অনিশ্চিত। তবে ভবিষ্যতে বড় কোনো শুল্ক আরোপ বা পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।

ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন এই দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম শুল্কের সুবিধা পাচ্ছে। তাই তারা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারে। অন্য দেশগুলো যখন বেশি শুল্কের চাপ সামলাতে হচ্ছে, তখন ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন কম খরচে পণ্য পাঠিয়ে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

 যুক্তরাষ্ট্রে কী প্রভাব পড়ছে: চলতি বছর এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির এই দেশটিতে ১০০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব এসেছে, যা অতীতের যেকোন তুলনায় দ্বিগুণ। বছরের শেষে তা ৩০০ বিলিয়নে পৌঁছাতে পারে।

দেশটিতে ভোগ্যপণ্যের দাম এখনো বাড়েনি, তবে ইউনিলিভার ও অ্যাডিডাসের মতো কোম্পানিগুলো বলছে তারা শিগগিরই পণ্যের দাম বাড়াবে।
 
রাজনৈতিক প্রভাব সামাল দিতে ট্রাম্প কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু এই শুল্কের ফলে খরচ বাড়ছে। ফলে নিম্ন আয়ের ভোটারদের জন্য ‘রিবেট চেক’ দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

অনেক চুক্তি এখনো কেবল কথা-কানুনের মধ্যে রয়েছে, লিখিত বা সই করা হয়নি। ট্রাম্প যে শর্ত দিয়েছে, যেমন-যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য কেনার বাধ্যবাধকতা, তা অনেক দেশ মানতে অস্বীকার করছে। তাই এসব চুক্তির কার্যকারিতা ও ভবিষ্যত এখনো স্পষ্ট নয়।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব নতুন বাধা তৈরি হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক বাণিজ্য কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ইউরোপীয় দেশ ও কানাডার মতো দীর্ঘদিনের মিত্ররাও এখন নতুন অর্থনৈতিক জোট ও অংশীদার খুঁজতে শুরু করেছে। 
বরাবরের মতো ট্রাম্প দাবি করছেন, এই নীতিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে মজবুত করবে। কিন্তু ইতিহাস বলে, এই ধরনের নীতির ফল সাধারণত সীমিতই হয়। আর যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য-এই ‘জয়ের’ মূল্য হতে পারে নেতিবাচক যেমন মূল্যস্ফতি, পছন্দের পণ্যের কমতি এবং ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।