সাকিব আল হাসানের সিদ্ধান্তে থেমে গেল চলচ্চিত্র, নির্মাতার হতাশা প্রকাশ

প্রায় এক যুগ আগে তরুণ-তরুণীদের জীবনের গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত হতে যাওয়া চলচ্চিত্র ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আচরণজনিত কারণে—এমন অভিযোগ করেছেন পরিচালক রাজিবুল হোসেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, ছবির কাজ মাঝপথে থেমে যাওয়ার নেপথ্যে মূল কারণ ছিল সাকিবের শুটিং থেকে সরে দাঁড়ানো।
২০১২–১৩ সালের দিকে কক্সবাজারে সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়। এতে অতিথি চরিত্রে অংশ নেন সাকিব আল হাসান। পরিকল্পনা অনুযায়ী টানা ১০ দিন শুটিং করার কথা থাকলেও শুটিং শুরুর কয়েক দিন পর হঠাৎ করেই কাজ বন্ধ করে দেন সাকিব। পরিচালককে জানিয়ে দেন, তিনি আর শুটিংয়ে অংশ নেবেন না। অনেক অনুরোধের পরেও তাঁকে রাজি করানো সম্ভব হয়নি। পরিচালক বলছেন, এ সিদ্ধান্তে চূড়ান্তভাবে থেমে যায় চলচ্চিত্রটির কাজ।
পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী রাজিবুল হোসেন জানিয়েছেন, সাকিব আল হাসানের সঙ্গে এই সিনেমার সম্পৃক্ততা আসে ফুজি ফিল্ম বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে। ফুজির সেই সময়কার শুভেচ্ছাদূত ছিলেন সাকিব। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সাকিবের বছরে আট দিনের শিডিউলের ভিত্তিতে সিনেমায় কাজ করার চুক্তি হয়। চুক্তির আলোকে পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক ও স্ক্রিপ্ট আলোচনার পর সাকিব শুটিংয়ে অংশ নেন।
রাজিবুল বলেন, “সাকিব খুব স্বাভাবিকভাবেই অভিনয় করছিলেন। দৃশ্য ধারণ হচ্ছিল ক্ল্যাপস্টিক ও প্রফেশনাল সাউন্ড রেকর্ডিংসহ। কিন্তু যখন সংবাদমাধ্যমে সিনেমায় তাঁর অংশগ্রহণ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়, তখনই সাকিব আপত্তি জানান। শুধু তাই নয়, স্পষ্ট জানিয়ে দেন—তিনি আর শুটিং করবেন না।”
পরিচালকের ভাষ্যমতে, সাকিবের আচরণ শুধু সিনেমার কাজ থামিয়ে দেয়নি, বরং এর প্রভাব পড়ে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের সাথেও। ফুজি ফিল্মসের সঙ্গে সাকিবের চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে নির্মাতাকে অনুরোধ জানানো হয়, সাকিবের অংশ বাদ দিয়ে সিনেমা সম্পন্ন করতে। কিন্তু ততদিনে ৬৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়ে গেছে প্রজেক্টে। রাজিবুল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং সিনেমার কাজ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেন।
“আমার কাছে মনে হয়েছে, অসমাপ্ত সত্য দিয়ে সম্পূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় না। তাই সাকিবকে বাদ দিয়ে কাজ শেষ করার কোনো মানে হতো না,” বলেন রাজিবুল হোসেন। তাঁর মতে, এটি শুধু তাঁর একান্ত ক্ষতির ঘটনা নয়; বরং এটি একটি সৃজনশীল শিল্পচর্চার প্রতিও অসম্মান।
অনেক বছর ধরে এই বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকলেও সম্প্রতি বিষয়টি আবার সামনে আনার ব্যাখ্যা দিয়ে রাজিবুল বলেন, “সম্প্রতি পুরোনো হার্ডডিস্ক ঘাঁটতে গিয়ে ছবিটির রেকর্ডিং খুঁজে পাই। মুহূর্তেই অনেক স্মৃতি ফিরে আসে। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, ঘটনার প্রকৃত চিত্র সবার সামনে তুলে ধরব। কারণ অনেকেই ছবিটির অসমাপ্ত থাকার জন্য পরিচালনার দুর্বলতাকে দায়ী করে আসছিল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—এটা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনৈতিক একটি ঘটনা।”
‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবিতে সাকিব ছাড়াও অভিনয় করেছিলেন মেঘলা মুক্তা, অর্ণব অন্তুসহ আরও কয়েকজন শিল্পী।
পরিচালক রাজিবুল হোসেন জানিয়েছেন, তিনি ফেসবুকে ধারাবাহিকভাবে সিনেমার পিছনের অজানা গল্পগুলো তুলে ধরছেন এবং ভবিষ্যতেও লেখার ইচ্ছা রয়েছে।