বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য আমদানিকে নিষেধাজ্ঞা, দুশ্চিন্তায় ভারতের ব্যবসায়ী ও ট্রাকচালক

ক্ষতির সম্মুখীন হলেও ভারত সরকারের আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন দেশটির স্থল বন্দরের ব্যবসায়ী, ট্রাক চালক থেকে শ্রমিকরা। তবে সঙ্গে রয়েছে দুঃচিন্তাও।
গতকাল শনিবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা কার্যকর হবে।
ওই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশ থেকে কোনো তৈরি পোশাক ভারতের মহারাষ্ট্রের নাভা শেভা এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা সমুদ্রবন্দর ছাড়া অন্য কোনো স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।
পাশাপাশি আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের কোনো শুল্ক পয়েন্ট এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি শুল্ক পয়েন্ট দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, তুলার বর্জ্য, প্লাস্টিকের পণ্য (শিল্প-উৎপাদনের নির্দিষ্ট কাঁচামাল ছাড়া) এবং কাঠের আসবাবপত্র আমদানি করা যাবে না। যদিও ওই নিষেধাজ্ঞা মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও চূর্ণ পাথরের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না।
ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। তেমনি সরকারের এই সিদ্ধান্তে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ভারতীয় পাড়েও।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন ঠিক সেভাবেই আমদানি বন্ধ হলে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হবে ভারতীয় ট্রাক মালিক, চালক ও বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের। তবুও দেশের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আপাতত স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
ফুলবাড়ী এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং স্থানীয় এক্সপোর্টার শুভঙ্কর নস্কর জানান, ‘ফুলবাড়ী শুল্ক পয়েন্ট দিয়ে মূলত বাংলাদেশ থেকে কাঠের আসবাবপত্র, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বনেটেড পানীয়, চিপস, তুলার বর্জ্য- এই ধরনের পণ্য আমদানি হত। স্থলপথে সবচেয়ে কম দূরত্বের মধ্যে এই ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে কাজ হতো। কিন্তু এখন তার পরিবর্তে কলকাতা এবং মহারাষ্ট্রের নাভা শেভা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের নির্দেশনা আসায় বাংলাদেশের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়বে, তারা সমস্যায় পড়বে। সেদেশের অর্থনীতিতেও এর একটা প্রভাব পড়বে বলে অভিমত তার।
ফুলবাড়ি স্থলবন্দরের ট্রাক ওনার্স প্রেসিডেন্ট মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে জুট, কাটা কাপড় এবং তুলা আসতো। কিন্তু এই ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার কারণে বাংলাদেশকে ঘুর পথে সেই পণ্য রপ্তানি করতে হবে, এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ওদের অর্থনীতিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে ভারতের অর্থনীতিতেও সামান্য প্রভাব পড়তে পারে কিন্তু তারপরেও দেশের স্বার্থে সেই সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে বাধ্য।'
শুধু তাই নয়, সরকারের সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি পণ্য এই সীমান্ত দিয়ে ভারতে না প্রবেশ করার কারণে পণ্য ওঠানো নামানোর কাজে কর্মরত শ্রমিকদের রুটি রুজিতেও টান পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।