বছরের পর বছর বাংলাদেশির মরদেহ আটকে রাখার নির্মমতা যেভাবে প্রকাশ পেল

মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে পড়ছেন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের বহু প্রবাসী শ্রমিক। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, সড়ক দুর্ঘটনায় কিংবা উঁচু স্থান থেকে পড়ে প্রবাসীদের মৃত্যু হচ্ছে। আর এসব মৃত্যুর কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে সৌদি মালিক ও নিয়োগকারীদের চরম অবহেলা ও খামখেয়ালিপূর্ণ আচরণ।
প্রতিবেদনটিতে একটি বিশেষ ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে সৌদি আরবে কর্মরত এক প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মস্থলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারান। তবে ওই শ্রমিকের সৌদি মালিক মরদেহ হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি শর্ত দেন, কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে গিয়ে দাফন করা হলে তবেই ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে পরিবারকে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও জানিয়েছে, অনেক সময়ই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ গোপন করা হয়। মালিকপক্ষ তদন্তে বাধা দেয়, যাতে সৌদি আইনের আওতায় ক্ষতিপূরণ আদায় না করা যায়। ফলে পরিবারের সদস্যরা কেবল প্রিয়জনকে হারানোর কষ্টই নয়, আইনি সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হন।
আরও একটি পরিবারের উদাহরণ উঠে এসেছে প্রতিবেদনে, যারা আত্মীয়ের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ পেতে সৌদি সরকারের কাছে ১৫ বছর ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন।
সৌদি আরব ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে দেশটিতে নতুন স্টেডিয়ামসহ বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ হবে। সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এই নির্মাণকাজে আরও অনেক বাংলাদেশি, ভারতীয় ও নেপালি শ্রমিকের মৃত্যু হতে পারে যদি শ্রমিক সুরক্ষা যথাযথভাবে নিশ্চিত না করা হয়।
সৌদি ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নির্মাণ প্রকল্পে যুক্ত শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগও রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভস পরিচালক মিনকি ওর্ডেন বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, 'শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সৌদি আরব এবং ফিফার জন্য অত্যন্ত জরুরি বিষয়।'
তিনি আরও বলেন, কাতার যখন বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়, তখন সেখানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও, দেশটি শ্রমিকদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছিল—যেমন সুপ্রিম কমিটি গঠন, জীবন বীমা, গরম থেকে রক্ষার ব্যবস্থা ইত্যাদি। কিন্তু সৌদি আরবে এমন কোনও কাঠামোগত উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি।
এই প্রেক্ষাপটে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ফেয়ার স্কয়ারের এই প্রতিবেদনটি বিশ্ববাসীর নজর কাড়ার পাশাপাশি সৌদি আরবের প্রতি জবাবদিহিতার দাবি তুলে ধরেছে।