জুলাইয়ে অভ্যুত্থান বিরোধী মিছিল: তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যোগসাজোশ

গেল বছরের ৪ আগস্ট। ছাত্রজনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের অর্ধশত কর্মকর্তা। সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করা ওই কর্মকর্তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করেন, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক কাজী আবু কাইয়ুম। ১৭ কর্মকর্তাকে দেয়া হয় কারণ দর্শানোর নোটিশ।
কাজী আবু কাইয়ুম বলেন, বিষয়টার তদন্ত নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের প্রশ্ন তোলাটা অস্বাভাবিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের উদ্দেশ্য আমাকে বিতর্কিত করা যাতে আমি এ তদন্ত কাজ না চালাতে পারি। এটা সহজ কাজ সিসিটিভি ফুটেজ আছে আমি কাউকে ঠকাতে পারবো না আবার কাউকে বাদ দিতেও পারবো না।
কিন্তু, ঘটনার এখানেই শেষ নয়। তদন্ত যখন এগিয়ে চলছিল, তখন আবু কাইয়ুমের বিরুদ্ধে একাট্টা হয় হাসিনা সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা। দেয়া হয় প্রাণ নাশের হুমকিও।
কাজী আবু কাইয়ুম আরও বলেন, টেলিফোনের হুমকি এবং আমার বদলির হুমকিসহ এমন অবস্থায় আছি যে আমি শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে আমার নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছি।
অভিযোগ আছে, কাজী আবু কাইয়ুমকে চাপে ফেলতে যোগসাজোশ আছে কিছু বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদেরও। যাদের তদবিরে পুরো তদন্ত কার্যক্রম পর্যালোচনায় ৭ সদস্যের কমিটি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
এদিকে লোকপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সরকারি কর্মচারি হয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরাসরি অংশ নেয়ার পরও, অভিযুক্তরা পার পেয়ে গেলে, তা প্রশাসনে বিশৃঙ্খলার নমুনা তৈরি করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যখন একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজের লাভের জন্য একটা দলের বা সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখায় তখন এটা প্রশাসনে, জনগণের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
সুষ্ঠু ও সৎভাবে প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব আইন ও বিধি প্রয়োজন, দেশে রয়েছে তার প্রায় সবটাই। কিন্তু, সমস্যা হলো, এসব আইনের ঠিকঠাক প্রয়োগ নেই। ফলে, হয় তদবির, নয় উৎকোচ, অথবা আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বের হয়ে যান অপরাধে জড়িত সরকারি কর্মকর্তারা।