ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের, শুল্ক নামল ১৯ শতাংশে

১৬ জুলাই ২০২৫ - ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ
 0
ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের, শুল্ক নামল ১৯ শতাংশে

ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫০টি বোয়িং জেট কিনবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ট্রুথ সোশালে দেয়া এক বার্তায় তিনি জানান, এই চুক্তি হয়েছে উচ্চ শুল্ক এড়ানোর বিনিময়ে। তবে এর বিনিময়ে ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ১৯ শতাংশ শুল্ক বসাবে। 

ট্রাম্প লিখেছেন, “এই চুক্তির অংশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া ১৫ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন জ্বালানি, ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য এবং ৫০টি বোয়িং জেট, যার অনেকগুলো ৭৭৭ সিরিজের, কিনতে সম্মত হয়েছে।”

হোয়াইট হাউসের বাইরে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, “ওরা আমাদের ১৯ শতাংশ শুল্ক দেবে, আমরা ওদের কিছুই দেব না? আমাদের পণ্যের ইন্দোনেশিয়ায় পূর্ণ প্রবেশাধিকার থাকবে। আরও কিছু চুক্তি খুব শিগগিরই ঘোষণা আসছে।”

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক সিএনবিসিতে বলেন, “আমরা শুল্ক দিচ্ছি না, ওরা দেবে। এটিই নতুন ভারসাম্য। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের কৃষক, গবাদি পশুপালক, মৎস্যজীবী এবং শিল্পকারখানার জন্য দরজা খুলে দিচ্ছি।”

এই নীতিই ভিয়েতনামের সঙ্গেও চালু হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পণ্য বেশি রপ্তানি করতে পারবে এবং আমদানিতে শুল্ক বসাবে।

এই চুক্তি সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি তেমন কমেনি। ২০২৪ সালে দুই দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি ৩.৭ শতাংশ বাড়লেও আমদানি বেড়েছে ৪.৮ শতাংশ। ফলে ইন্দোনেশিয়ার অনুকূলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারে।

ইন্দোনেশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মূলত পাম অয়েল, ইলেকট্রনিকস, জুতা, টায়ার, রাবার ও হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়। যদিও কাগজে ইন্দোনেশিয়ার গড় শুল্কহার ৩৭ শতাংশ, বাস্তবে গত বছর তা ছিল মাত্র ৬ শতাংশ।

ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক সমন্বয় মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি সুশিওয়িজোনো মোয়েগিয়ারসো জানিয়েছেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতি প্রস্তুত করছি, যেখানে ইন্দোনেশিয়ার ওপর আরোপিত শুল্ক, অশুল্ক এবং বাণিজ্যিক শর্তাবলি বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। শিগগিরই জানানো হবে।”

ট্রাম্প গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, ১ আগস্ট থেকে শুল্ক ৩২ শতাংশে পৌঁছাবে, যদি না এর আগে চুক্তি হয়। একই হুমকি তিনি দিয়েছেন আরও দুই ডজন দেশের প্রতি। কানাডা, জাপান, ব্রাজিল এবং তামার রপ্তানির ক্ষেত্রেও শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর হুমকি এসেছে।

এই চুক্তির সময়টা খুব তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইইউ কমিশন ৭২ বিলিয়ন ইউরোর মার্কিন পণ্যে যার মধ্যে বোয়িং, গাড়ি, হুইস্কি, কেমিকেল ও কৃষিপণ্য রয়েছে শুল্ক বসাতে চায়।

ট্রাম্প ইউরোপীয় পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় মন্ত্রীদের বৈঠকে ইইউ বাণিজ্যপ্রধান মারোস সেফচোভিচ বলেন, “যদি আলোচনা ভেস্তে যায়, তবে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষা দিতে আমরা প্রস্তুত।”

আগামী কয়েক সপ্তাহেই বোঝা যাবে ট্রাম্পের শুল্কনীতি কতটা কার্যকর হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বোয়িং কেনার চুক্তি ও মার্কিন কৃষিপণ্যের প্রতিশ্রুতি মিললেও, ১৯ শতাংশ শুল্কে ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি চাপের মুখে পড়বে। অন্যান্য দেশও হয়তো এই ধারায় আসবে, হয়তো আসবে না। তবে ২০২৫ সালের গ্রীষ্ম শেষে বিশ্বের বাণিজ্য মানচিত্র বদলে যেতে পারে।