‘নির্দোষ হলে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন কেন’—টিউলিপ সিদ্দিককে ঘিরে প্রশ্ন দুদক চেয়ারম্যানের

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন প্রশ্ন তুলেছেন, যদি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন, তবে তিনি যুক্তরাজ্যে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলেন কেন?
সোমবার (১৬ জুন) ঢাকায় দুদক সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। তিনি জানান, টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে একাধিক দুর্নীতির মামলা রয়েছে।
মোমেন বলেন, “যদি টিউলিপ সত্যিই নির্দোষ হয়ে থাকেন, তাহলে তার আইনজীবী আমাদের কাছে চিঠি পাঠালেন কেন? মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগও বা করলেন কেন? যদি তিনি কিছুই না জানেন, তাহলে এসব পদক্ষেপের যৌক্তিকতা কোথায়?”
তিনি আরও বলেন, টিউলিপের নাম তিনটি দুর্নীতির মামলায় যুক্ত আছে এবং আরও একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। দুদক তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই বিবেচনা করছে এবং সে অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, “২০১৩ সালে টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে একটি মাছের খামার থেকে ৯ লাখ টাকা আয়ের তথ্য আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের আয়, সম্পদ বৃদ্ধি এবং নাগরিকত্বের দ্বৈত অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কখনো ব্রিটিশ, কখনো বাংলাদেশি পরিচয় গ্রহণ—এটা যথেষ্ট সন্দেহজনক।”
তিনি বলেন, “গুলশানের একটি প্লট এবং রাজউকের জমি বরাদ্দসহ একাধিক বিষয়ে অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার স্বর্ণালঙ্কারের পরিমাণ এক পর্যায়ে হঠাৎ ১০ ভরি থেকে বেড়ে ৩০ ভরিতে দাঁড়ালেও দাম অপরিবর্তিত ছিল—যা স্বাভাবিক নয়।”
দুদক চেয়ারম্যান জানান, টিউলিপকে সমন, তলবি চিঠি, এমনকি প্রয়োজনে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও তলব করা হবে।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কিত বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন টিউলিপ। হাউস অব কমন্সে চা–চক্রে আমন্ত্রণ জানালেও ইউনূস সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি।
টিউলিপ ৪ জুন এক চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ জানিয়ে লিখেছিলেন, “আমার বিরুদ্ধে যেসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তা আমার খালা শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে। এই ভুল বোঝাবুঝি দূর করার আশায় সাক্ষাতটি প্রয়োজন ছিল।”
তবে ৯ জুন যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস স্পিকার লিন্ডসে হোয়েলের সঙ্গে দেখা করলেও টিউলিপের আমন্ত্রণে সাড়া দেননি। পরবর্তীতে Financial Times-এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, টিউলিপকে সাক্ষাৎ দেওয়া হবে না।
গত বছরের আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের নাম উঠে আসে। জানুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকেও পদত্যাগ করতে হয় তাকে।
দুদক জানায়, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই গুলশানের একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেন টিউলিপ, যা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’-এর একটি উদাহরণ। এ নিয়ে ১৫ এপ্রিল দুদক একটি মামলা দায়ের করে।
এছাড়া ১৩ এপ্রিল পূর্বাচলে ৬০ কাঠা জমি বরাদ্দের অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এই মামলাগুলোর প্রেক্ষাপটে টিউলিপের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, যথাযথ প্রমাণ ছাড়াই এবং সমন বা যোগাযোগের যথাযথ চেষ্টার আগেই দুদক তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে—যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম The Standard-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের আইনজীবী প্রতিষ্ঠান Stephenson Harwood LLP মার্চে একটি চিঠি পাঠিয়ে প্রমাণ চেয়ে আবেদন জানালেও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ এখনো তা উপস্থাপন করতে পারেনি।