চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে, শেরপুরে বন্যার শঙ্কা

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত, ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বর্ষণের ফলে শেরপুরের চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আকস্মিক বন্যার শঙ্কায় রয়েছে এলাকাবাসী।
নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ শুরু করেছে।
গত বছরের অক্টোবরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ। দশদিনের বেশি স্থায়ী সেই বন্যায় জেলায় ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় হাজার কোটি টাকা। প্রাণহানিও ঘটেছিল অন্তত দশজনের। এবারও এমন শঙ্কায় ভুগছেন স্থানীয়রা। শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার কিছু নিচু এলাকাতেও পানি ঢুকেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, ‘আমরা এখনো গত বছরের ক্ষতি পুরোপুরি সামলে উঠতে পারিনি। আবারো যদি এমন পানি বাড়তে থাকে, তাহলে বাড়ির ফসল তো যাবে, ঘরবাড়িও টিকবে না।’
ঝিনাইগাতীর মহারশী নদীর তীরবর্তী এলাকার ফুলমতি বলেন, ‘রাতদিন আতঙ্কে থাকি। পানি বাড়ছে, প্রশাসনের লোকজন মাইকিং করছে। কিন্তু আমরা যাব কোথায়?’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই একটি সতর্কবার্তা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০ মে পর্যন্ত শেরপুর জেলার নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হতে পারে। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষিতেও বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে, দিঘিরপাড় ফাজিল মাদরাসা সংলগ্ন বাঁধ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
পাহাড়ি ঢলের এই বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডির পক্ষ থেকে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় সমন্বিত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক জানান, ‘ভবিষ্যতের সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের জরুরি প্রতিরক্ষামূলক কাজের প্রস্তুতি আছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, ‘গত বছরের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে দ্রুত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হবে।’
এদিকে জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেলার প্রায় ৯৪ শতাংশ পাকা ধান ইতোমধ্যেই কাটা শেষ হয়েছে। তবে আকস্মিক ঢলে ঝিনাইগাতী উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫ একর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য দ্রুত অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ পাকা ধান কেটে উঁচু স্থানে সংরক্ষণের তাগিদ দেয়া হয়েছে কৃষকদের।
জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।