বিদেশি বিনিয়োগে জাতীয় স্বার্থ-নিরাপত্তা নিশ্চিতে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

১৩ মে ২০২৫ - ১৩:১৮ অপরাহ্ণ
 0
বিদেশি বিনিয়োগে জাতীয় স্বার্থ-নিরাপত্তা নিশ্চিতে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদনের আগে জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় বিনিয়োগের পথ সহজ করে বাস্তব উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। মঙ্গলবার (১৩ মে) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে আলোচনায় এসব বিষয়ে একমত পোষণ করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।

একাধিক দলের প্রতিনিধিরা জানান, বিগত সরকারের আমলে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে বেশকিছু প্রকল্প নেয়া হয়। যা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময় বিডাকে আশ্বস্ত করে তারা বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিতে নির্বাচিত সরকারই একমাত্র সমাধান নয়। এজন্য দরকার রাজনৈতিক অস্থিরতার টেকসই সমাধান, নীতির ধারাবাহিকতা ও সুশাসন। কারণ নির্বাচিত সরকারের আমলে এসবের ঘাটতি ছিল। টেকসই বিনিয়োগ নীতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ আলোচনায় ১৯টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানায় বিডা। এতে বিএনপি ছাড়া প্রায় সব দল অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ১০টি পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক অঞ্চল, চারটি নতুন বন্দর ও মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার নানা উদ্যোগ তুলে ধরে বিডা।

আলোচনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান বলেন, প্রকল্প নেয়ার আগে সেটি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। হাওরে সড়ক তৈরি পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। পায়রা নদীবন্দর হওয়ার মতো অবস্থা নেই। কিন্তু মহাযজ্ঞ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, উচ্চ সুদ হারের কারণে বিনিয়োগ বাড়বে না। দুর্নীতি যেভাবে হচ্ছে, পরিবহন ব্যয় বাড়ে চাঁদার কারণে। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এসব কাজে জড়িত। করপোরেট কর না কমালে বিনিয়োগ আশানুরূপ বাড়বে না। যে ফেোরলি কর দেয়, তাকে বরং নানা হয়ানির শিকার হতে হয়। জমি অধিত্রহণ থেকে শুরু করে জায়গায় জায়গায় এ হয়রানি চলে। আইনের দোহাই দিয়ে হয়রানি বাড়ানো হয়। এক কথায় সুশাসনের অভাবের কারণে।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি সরকার যেসব পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোকে স্বাগত জানাই।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, পরিবেশ তো আগের মতোই আছে। বিনিয়োগ বাড়বে কীভাবে। হয়রানি একটা বড় জায়গা বিনিয়োগ কম হওয়ার পেছনে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ কত আনতে পারল সেটি বড় ফোকাসের জায়গা না, কীভাবে ফাউন্ডেশনটা তৈরি করে দেয়া যায়। যাতে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ প্রবাহের ধারাবাহিকতা থাকে।

তিনি বলেন, জ্বালানি সমস্যা সমাধান ও পোর্ট সুবিধা বাড়াতে হবে। ব্যাংকগুলো সাধারণ মানুষকে ঋণ দেয় সেটি স্বল্প পরিমাণে। আর যারা টাকা বেশি চুরি করে তারা বেশি ঋণ পায়। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন ও সংস্কার কাজ করা প্রয়োজন।

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব আবুল খায়ের বলেন, দেশে এখন প্রধান সমস্যা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। লোকাল ব্যবসা শুরু করতে ১৮ জায়গা থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। এই ১৮ জায়গায় টাকার বান্ডিল দিতে হয়। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের এ অবস্থা হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অসুবিধা তো আরও বেশি হবে। ভোলাতে গ্যাস পাওয়া গেছে, এটি বরিশালে আনা গেলে এ অঞ্চলে শিল্প বাড়ানো সম্ভব। পায়রার পরিবর্তে কাউখালীতে ডিপ সি বন্দর করার পরামর্শ দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেছেন, ‘তার চারটি প্রশ্ন আছে। প্রশ্নগুলো হলো-কে করবে, কেন করবে, কোথায় করবে, তাতে আমাদের লাভ কী- এ চারটা প্রশ্নের সদুত্তর ছাড়া বিনিয়োগের প্রচেষ্টায় লাভ নেই। এখানে প্রতিযোগিতা সক্ষম না করে, বৈষম্য করলে হবে না। ‘national fdi stretegy and’ এটা ভালো। ম্যানুফেকচারিং হাব বানাবেন।’

তিনি বলেন, অতীতে এমন কিছু বিনিয়োগ হয়ে গেছে যেগুলো এখন বোঝায় পরিণত হয়েরছে। এগুলো থেকে নড়তেও পারছে না, সরতেও পারছেন না, ধরতেও পারছেন না। এখন আপনি নতুন করে আর কোনো বোঝা যেন না বাড়ান। সেগুলো সম্পর্কে কিছু বলে না গেলে এই বিশফোঁড়া নিয়ে ভবিষ্যতে যারা আসবে তারা কী করবে?

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর- যেটা আমরা স্থানীয় অপারেটর দিয়ে করতে পারি, ওখানে অনেকেই আগ্রহী আছে ভারত, চীন, জাপান- আপনি কাকে অগ্রাধিকার দেবেন। সেটির ক্রাইটেরিয়া কী হবে।

এম এম আকাশ বলেন, যারা বিনিয়োগকারী তারা পলিটিকাল ধারাবাহিকতা চান। ফলে সেই নিশ্চিয়তা না পেলে তারা বিনিয়োগ করতে চাইবেন না। সুতরাং বিনিয়োগ পরিবেশ খুবই গৌণ বিষয়৷ কারণ, রাখানইন করিডর নিয়ে যু্দ্ধ বেধে গেলে সব বিনিয়োগ পরিবেশ উল্টিয়ে যাবে। ফলে পলিটিক্যাল কনটিউনিটি বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

তিনি বলেন, ডমেস্টিক পলিসি এনভায়রনমেন্টকে বিগ ক্যাপিটালের বাইরে আনবেন কিনা, ফরেন ক্যাপিটালের বদলে ন্যাশনাল ক্যাপাসিটিতে গুরুত্ব দিবেন কিনা, কান্ট্রিওয়াইস জিওপলিটিক্সে আপনি কোনো বৈষম্য করবেন কিনা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সহকারী সদস্যসচিব ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি বলেন, জুলাই চার্টারের মতো ইকোনমিক চার্টার তৈরির করতে হবে। যেখানে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দল সাধারণ ঐক্যমত্যে পৌঁছাবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, যুব সমাজ যেন বেশি অগ্রাধিকার পায়, সেটি দেখতে হবে। পরিবেশগত বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া জরুরি। মেনুফেকচারিং হাব তৈরি করতে চাচ্ছি,  কিন্তু সে জন্য দক্ষ লোক তৈরির প্রচেষ্টা কম। কারিগরি শিক্ষার ওপরে জোর দেয়ার দাবি জানান তিনি।