২ জনকে হত্যার ‘অপারেশনের’ টাকা গ্রামের মসজিদে দান করেন র‌্যাব কর্মকর্তা

২৫ জুন ২০২৫ - ০৭:৩১ পূর্বাহ্ণ
 0
২ জনকে হত্যার ‘অপারেশনের’ টাকা গ্রামের মসজিদে দান করেন র‌্যাব কর্মকর্তা

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত গুমের ঘটনা তদন্তে গত ২৭ আগস্ট পাঁচ সদস্যের গুম সংক্রান্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দু’টি তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে কমিশন। যেখানে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গুমের ভয়াবহ সব ঘটনা।

গুম সংক্রান্ত কমিশন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কমিশনে গুম সংক্রান্ত ১ হাজার ৮০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। আর গুমের ঘটনাগুলোর পেছনে ব্যক্তিগত অসদাচরণের চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতির একটি ‘পদ্ধতিগত সমস্যা’ কাজ করেছে।

গুম কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুমের এমন অপরাধগুলোকে নীরবে প্রশ্রয় দেয়া হতো বলে উঠে এসেছে। আর যেসব ব্যক্তি এমন অপরাধ করতেন, প্রকৃত অর্থে তাদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হতো না।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক নথিভুক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনার ৭টি নথি পর্যালোচনা করেছে কমিশন। যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুমসহ গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার ‘প্রাথমিক সাক্ষ্য প্রমাণ’ পাওয়া গেছে। কমিশন বলছে, গুমের ধরন থেকে স্পষ্ট যে, এসব কোনো একক ব্যক্তির কর্মকাণ্ড ছিল না। বরং বিভিন্ন ইউনিটের একাধিক সদস্য এসব ঘটনায় জড়িত ছিলেন।

গুম সংক্রান্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে একটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে সেনাবাহিনী থেকে র‌্যাবে আসা এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে গুমে জড়িত থাকার ‘প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণ’ রয়েছে। অথচ, তৎকালীন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ তাকে একজন ‘অত্যন্ত দক্ষ কর্মকর্তা’ বলে  প্রশংসা করেন।

গুম কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, র‌্যাবের জ্যেষ্ঠ একজন জেনারেল কমিশনকে জানিয়েছেন, তিনি সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে র‌্যাবে আসা কর্মকর্তারা যাতে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন সেটির চেষ্টা করেছিলেন। ব্রিফিং ও ডিব্রিফিংয়ের একটি প্রক্রিয়ার আওতায় যেন নিরস্ত্র মানুষদের বেআইনিভাবে হত্যা করা না হয় সে বিষয়ে কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হতো।

কমিশনের প্রতিবেদনে একটি ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, এমন একটি ব্রিফিং পর্বে র‌্যাব থেকে ইউনিটে ফিরে আসা জুনিয়র এক কর্মকর্তাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি সেখানে কাউকে হত্যা করেছেন কিনা, করলে কতজনকে করেছেন। প্রথম দিকে ওই কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলতে দ্বিধাবোধ করেন, পরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দু’জনকে হত্যা ছাড়াও আরও চারজনের হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন বলে স্বীকার করেন।

গুম সংক্রান্ত কমিশন জানায়, যেহেতু এসব ঘটনার পর টাকা বিতরণ করা হতো, তাই ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরবর্তীতে ওই জুনিয়র কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, তিনি ‘অপারেশনের’ পর পাওয়া টাকা কী করেছেন। তখন জুনিয়র ওই কর্মকর্তা বলেন, তিনি গ্রামের মসজিদে টাকাটা দান করে দিয়েছেন।

কমিশন বলছে, এই চিত্র শুধু সেনাবাহিনীতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পুলিশের উপ-পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতনদের তৈরি করা কাগজপত্রে তাদের জোর করে সই করানো হতো, যেগুলোর মাধ্যমে তারা এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়তেন। আর এসবের বিরোধিতা করার সাহস তাদের ছিল না।