খালেদা জিয়ার পরামর্শ: ড. ইউনূসের সঙ্গে বিরোধ নয়, সমঝোতা করুক বিএনপি

১১ জুন ২০২৫ - ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ
 0
খালেদা জিয়ার পরামর্শ: ড. ইউনূসের সঙ্গে বিরোধ নয়, সমঝোতা করুক বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিরোধে জড়ানোর পরিবর্তে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার পথ খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ঈদুল আজহার দিন, ৭ জুন, গুলশানের ফিরোজা বাসভবনে দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তিনি এই পরামর্শ দেন বলে বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

ড. মোশাররফ জানান, বিএনপি নেত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন, "ড. ইউনূসের সঙ্গে আমাদের বিরোধের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি কি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী?" তিনি আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় টানাপোড়েন না করে আলোচনার মাধ্যমে অমিমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজে নেওয়া উচিত।

স্থায়ী কমিটির আরও দুই সদস্যের বরাতে জানা যায়, খালেদা জিয়া স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে অতি বিতর্কে না গিয়ে, বাস্তবসম্মত অবস্থান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোই এখন দলের জন্য উপযুক্ত কৌশল। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ড. ইউনূস ও বিএনপির মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা নিরসনের জন্য আলোচনার টেবিলে বসা ছাড়া বিকল্প নেই।

এই প্রেক্ষাপটে, বর্তমানে চারদিনের একটি সফরে লন্ডনে অবস্থান করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস। সেখানে আগামী ১৩ জুন তারেক রহমানের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপি সূত্র বলছে, ওই বৈঠকে নির্বাচনকালীন সময়সূচির বিষয়টি কেন্দ্রীয় আলোচ্য হবে।

এছাড়াও, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং কমিশনের সঙ্গে বিএনপির কিছু বিষয়ে যে মতবিরোধ রয়েছে, সেগুলোও আলোচনায় স্থান পেতে পারে। তবে সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম বন্দর ও মিয়ানমার সীমান্ত ইস্যুতে করিডোর বিতর্ক বৈঠকে গুরুত্ব পাবে না বলেই ধারণা করছেন নেতারা। সময় থাকলে সেসব বিষয়ে মতবিনিময় হতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন।

দলীয় নেতৃবৃন্দের মতে, বিএনপি ও সরকারের মধ্যে বর্তমানে মূল পার্থক্যটি হচ্ছে নির্বাচনের নির্ধারিত সময়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী বছরের এপ্রিল মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচন চায় চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই। এই অবস্থান থেকে দুই পক্ষ যদি কিছুটা ছাড় দেয়, তবে একটি বাস্তবসম্মত সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব বলেও মনে করছে বিএনপি।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা যে এজেন্ডাগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসেছি, সেগুলো দলীয় সিদ্ধান্তেই হয়েছে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেসব আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। আশা করছি, ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের আসন্ন বৈঠকে এসব বিষয় গুরুত্ব পাবে।”

এদিকে, ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে সম্ভাব্য এই বৈঠককে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১০ জুন (মঙ্গলবার) তিনি বলেন, “আমি মনে করি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এই মিটিং অনেক গুরুত্ব বহন করে। যদি এই বৈঠকটি সফল হয়, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার নতুন একটি দিক উন্মোচিত হতে পারে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব দিয়েছি এবং তাঁর সফলতা কামনা করছি।”