বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যু

পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে কুমিল্লার দুই উপজেলায় চারজন, কিশোরগঞ্জের দুই উপজেলায় তিনজন, নেত্রকোণায় একজন, সুনামগঞ্জে একজন ও চাঁদপুরে একজনের মৃত্যু হয়।
নিহত দুই স্কুলছাত্র হলো- বরুড়া উপজেলার পয়ালগচ্ছ গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে মো. ফাহাদ হোসেন (১৩) ও একই এলাকার বিলাল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (১৪)। তারা বড়হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
বাকি দুজন হলেন, মুরাদনগর উপজেলার দেওরা গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া (৩৫) ও কুরবানপুর পশ্চিম পাড়া (কালীবাড়ি) গ্রামের মৃত বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬০)।
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে ও সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর এবং কলমা হাওরে এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ্র দাসের ছেলে ইন্দ্রজিত দাস (৩৬), খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের আনেয়ারপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. ইদ্রিস মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া (১৪) ও মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের রানিগঞ্জ গ্রামের আশরব আলীর স্ত্রী ফুলেছা বেগম (৬০)।
মিঠামইন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্পণ বিশ্বাস বলেন, সোমবার সকালে বাড়ির পাশে ধানের খর শুকাতে দিচ্ছিলেন ফুলেছা বেগম। এ সময় বজ্রপাতে নিহত হন তিনি।
অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, আজ সকালে ইন্দ্রজিত দাস বাড়ির পাশে হালালপুর হাওরে পাকা ধান কাটছিলেন। এ সময় বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। একই সময় খয়েরপুর হাওরে স্বাধীন মিয়া ধান কাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হন।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার (২২) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিমন তালুকদার শাল্লা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতোই সকালে গরুকে ঘাস খাওয়াতে বাড়ির পাশের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে যান রিমন। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তিনি নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই বজ্রপাতের শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই রিমন ও তার সঙ্গে থাকা গবাদিপশুর মৃত্যু হয়।
চাঁদপুর: কালবৈশাখী ঝড়ে চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতের বিকট শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে বিশকা রানী সরকার (৪৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার উত্তর কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের নাহারে গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত বিশকা রানী সরকার চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৩নং ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের পূর্বপাড়া মন্দির ওয়ালা বাড়ির হরিপদ সরকারের স্ত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন ধানের জমিতে কাজ করছিলেন। ওই সময় আকাশে মেঘ করে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতের শুনে স্ত্রী বিশকা রানী সরকার মাটিতে পড়ে যান। পরে তার স্বামী হরিদাস সরকার তাকে উদ্ধার করে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিশকা রানী সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন।
কচুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, মৃত বিশকা রানী সরকারের শরীরে বজ্রপাতের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায় নাই। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মৃতদেহ নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। এ মৃত্যু নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ না থাকায় সামাজিকভাবে সৎকারের জন্য অনুমতি প্রদান করা হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে মারা যেতে পারেন। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।
নেত্রকোণা: নেত্রকোণার মদনে বজ্রপাতে আরাফাত মিয়া (১০) নামে এক মাদরাসাছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোর ৬টার দিকে উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে নিজ বাড়ির সামনেই তার মৃত্যু হয়। আরাফাত উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অলিদুজ্জামান জানান, আরাফাত নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থীর বজ্রপাতে মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।