বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ব্যর্থ ভারত: বিশ্লেষক

৭ আগস্ট ২০২৫ - ০৮:২৯ পূর্বাহ্ণ
 0
বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ব্যর্থ ভারত: বিশ্লেষক

আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে তরুণরা। তাই তাদের আবেগ ও প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাস্তববাদী সম্পর্ক গড়লে ভারতেরই লাভ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের বিজেপি সরকার সুসম্পর্ক গড়তে চাইছে না—যা উভয় পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর। বরং এতে দুই দেশের দূরত্ব বাড়ছে। যদিও গত এক বছরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ’-এর একদফা দাবিতে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন বিপুল জনস্রোতের লক্ষ্য ছিল গণভবন। তবে জনস্রোত গণভবনে পৌঁছানোর আগেই, ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বেলা আড়াইটায় একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সমীকরণে তিক্ততা শুরু হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতীয় গণমাধ্যমে শুরু হয় নানা ধরনের প্রোপাগান্ডা। এরপর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে একাধিকবার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টাও করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের বৈঠকে বরফ গলানোর চেষ্টাও ছিল স্পষ্ট। তবে খোলা চোখে তার কোনো ফল মেলেনি। বরং শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে পাঠানো চিঠিরও কোনো জবাব মেলেনি এখনো।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা চেয়েছি তাকে ফেরত দেওয়া হোক, যাতে বিচারপ্রক্রিয়ায় তাকে আনা যায়। কিন্তু ভারত থেকে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া আসেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি।”

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুধাবনে ভারত সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। গত এক বছরে সম্পর্ক উন্নয়নে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি দিল্লি। এই নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন তারা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, “এটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতাই প্রকাশ করে। কোনো দেশের সরকার যখন-তখন পরিবর্তিত হতেই পারে। সেই পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রতিবেশী দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে জায়গায় বিজেপি সরকারের যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও সম্পর্ক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়েছে।”

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ূন কবির বলেন, “আগামীর সময় তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা পূরণের সময়। এই কাজ সহজ নয়—এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের আরও সৃজনশীল হতে হবে, সুশাসনের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে এগিয়ে যেতে হবে।”

তরুণদের হাত ধরে যে নতুন বাংলাদেশের সূচনা—তার আবেগ ও চেতনার প্রতি দিল্লিকে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এই বিশ্লেষকরা।