মোদি কেন পাকিস্তানকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে, কী পরিকল্পনা রয়েছে তার

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে বন্দুক হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে নয়াদিল্লি। কিন্তু ইসলামাবাদ ওই হালায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়। তবে ভারত পেহেলগামে হামলায় পাকিস্তান জড়িত কিনা তার নিরপেক্ষ তদন্তের দিকে না গিয়ে বরং দেশটির সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের একটি বক্তব্যকে সামনে এনে ওই হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দোষ দিয়ে আসছিল।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে ভারত কেন পাকিস্তানকে যুদ্ধের দ্বারপ্রাপ্ত নিয়ে যেতে চাইছে। এ নিয়ে দীর্ঘ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডন। এতে বলা হয়েছে- হিন্দুদের জনক বীর সাভারকরের জীবনাদর্শ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জীবনেও প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে গত দুই মাস আগে মোদি তার আরএসএস প্রেরণার উৎস বীর সাভারকরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সাভারকরের চিন্তা ছিল দুর্ধর্ষ। ১৯৩৮ সালে সাভারকর বলেছিলেন, মুসলিম সমস্যা সমাধানে ভারতের উচিত জার্মানির উদাহরণ অনুসরণ করা। “...জার্মানির যেমন অধিকার আছে নাৎসিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়া এবং ইতালিরও অধিকার আছে ফ্যাসিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়া। মোদিও হয়তো এ ধরনেরই পরিকল্পনা করছে।
এমন ঘটনাগুলোর ফলেই ইউরোপ এক সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রক্তাক্ত ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। মোদিও হয়তো দক্ষিণ এশিয়াতে সেরকইম পরিকল্পনা করতে চাইছে। পাকিস্তান-ভারত গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে এবারই সবেচেয়ে বেশি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। দুই দেশের যুদ্ধবিমানগুলো আকাশে একে অপরের প্রতি হামলায় লিপ্ত; আর এ শব্দের ফলে নতুন প্রজম্ম ঘুম থেকে জেগে উঠছে। যা এক সময় তাদের দাদা-দাদিদের জাগিয়ে তুলত।
‘কিন্তু আমরা এখন যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি, তার মূল কারণ দিল্লির নিজের মানসিক অসুস্থতা: উন্মত্ত জনভিত্তি, সম্মানহানির উদ্বিগ্নতা এবং রয়েছে এক দখলদারিত্মের লড়াই। মোদির কাশ্মীর সংযুক্তিকরণ প্রচেষ্টা ছিল একেবারে পাঠ্যবইয়ে থাকা জনসংখ্যা পরিবর্তনের কৌশল; সাভারকরের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘মুসলিম সমস্যা’, এর এ সমস্যা সমাধানে ভারতের নিজের সর্বোচ্চ সংবিধান ছিঁড়ে ফেলতেও আপত্তি ছিল না।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল নিয়ে সেখানকার ছেলে-মেয়েদের কোনো মতামতই নেয়া হলো না। তাই বলা চলে পেহেলগামে হামলাটা কোনো ‘কারণ’ ছিল না; সেটা ছিল এক প্রতিক্রিয়া। বছরের পর বছর ধরে সেখানে দমন-পীড়নের কারণেই এমনটা হয়েছে।
পাকিস্তানও পেহেলগামে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানাল এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান করার পাশাপাশি শান্তির কথা বলেছে। কিন্তু এই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে বেসামরিক মানুষের জন্য পানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়, তিন বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুর দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে। যার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। আবার এর মাধ্যমে নারীকেই সম্মান জানানো হয়েছে।
কাশ্মীর সংকটে মোদি প্রতিবার একই নীতি অনুসরণ করেন: দায় চাপান পাকিস্তানের ওপর, তারপর প্রতিশোধের আর্তি। যেমন তিনি করেছিলেন ২০১৬ সালের উরির ঘটনায়, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায়, আর এখন পেহেলগাম নিয়ে। এমন এক অভিযোগ- যে দুই দেশ পারমাণকি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং পৃথিবী ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ভারত কখনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
প্রমাণ উপস্থাপন না করে প্রধানমন্ত্রী আবারও ছুটেছেন সীমান্তে, যেন ভরসা শুধুই গোঁজামিল। ভারতের গেরুয়া দশকের অন্তিম প্রান্তে এসে মোদি নিজের উন্মাদ জনভিত্তির ওপর নির্ভর করছেন, আর সেই জনভিত্তি আবার তাকেই খেয়ে নিচ্ছে — কারণ এখন শান্তির ডাক মানেই রাজনৈতিক আত্মহত্যা। প্রতিটি নির্বাচনের দরকার একটি যুদ্ধ, আর প্রতিটি লাশ যেন নির্বাচনী প্রচারের হাতিয়ার।
আর তার চেয়ে বেশি লজ্জার বিষয়, পশ্চিমা মিত্ররা এতদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তার জন্য ভারতের ওপর ভরসা করে আসছিল। কিন্তু শতাব্দী বদলালেও মোদির চরিত্র খুব বদলায় না। একজন নাৎসি তো শেষ পর্যন্ত নাৎসিই থাকে।
আর কোনো নাৎসিই ততক্ষণ পর্যন্ত থামে যা যতক্ষণ পর্যন্ত তার মুখে ঘুষি মারা না হয়। সেই ঘুষিটি দিয়েছে পাকিস্তান বিমানবাহিনী, দক্ষতা ও দায়িত্বে অটল থেকে। (অন্য বাহিনীগুলোর উচিত এর থেকে শিক্ষা নেওয়া।) পাঁচটি বিমান মাঝপথেই গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। আর সেই খবরের সত্যতা প্রকাশ করেছে সিএনএন, রয়টার্স ও ফরাসি গণমাধ্যম। যেখানে রয়েছে ভারতের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রাফাল বিমান।