দলে নেই এনামুল, ফিরলেন নাঈম—নির্বাচকদের কী যুক্তি?

২৩ জুন ২০২৫ - ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ
 0
দলে নেই এনামুল, ফিরলেন নাঈম—নির্বাচকদের কী যুক্তি?

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পরও আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি এনামুল হক বিজয়ের। ১৪ ম্যাচে ৪টি শতকে ৮৭৪ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটারকে দল থেকে বাদ দেওয়ায় প্রশ্ন উঠছে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে। তার চেয়েও বিস্ময়কর, এত বড় পারফরম্যান্সের পরও তাঁকে নিয়ে আলোচনা পর্যন্ত হয়নি খুব একটা।

ঢাকা লিগে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় কাটানোর ফাঁকে এপ্রিলেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ডাক পান এনামুল। যদিও সেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। প্রায় তিন বছর পর জাতীয় দলে ফেরা এই ব্যাটার একটি ইনিংসে করেন ৩৯ রান, কিন্তু গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসেই ছিলেন ব্যর্থ—একবার শূন্য, আরেকবার মাত্র ৪ রান। তাঁর ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল স্পষ্ট, আউট হয়েছেন অপ্রতিরোধ্য ডেলিভারিতে নয়, বরং দৃষ্টিকটুভাবে।

জাতীয় দলের স্কোয়াড ঘোষণার পর এনামুলকে দলে না রাখার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই নির্বাচক প্যানেলের সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, “আমরা যাঁকেই দলে নিই, সেটা ভেবে-চিন্তেই নিই। কেউ পারফর্ম না করলে সেটাও হতাশাজনক। বিজয় একটু মিস করেছে, এটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই দেখছি।”

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সকে তারা অগ্রাহ্য করবেন না বলেই জানিয়েছেন রাজ্জাক, “এটা নয় যে বিজয় বাদ পড়েছে মানে ঘরোয়ার পারফরমারদের আর বিবেচনায় নেওয়া হবে না। আমাদের দল গঠনের ভিত্তি ঘরোয়া পারফরম্যান্সই। সেটা আমরা আগেও দেখিয়েছি, ভবিষ্যতেও ধরে রাখব।”

প্রসঙ্গত, বিজয় জাতীয় লিগেও ছিলেন দুর্দান্ত। গত নভেম্বরে শেষ হওয়া মৌসুমে ৭ ম্যাচে করেছিলেন ৭০০ রান। তবে টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার পর রান না পাওয়ায় তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এনামুলের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৭টি টেস্টে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ১৪৩ রান।

এই পরিস্থিতিতে ৩২ বছর বয়সী ব্যাটারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বললেন, “বিজয় ব্যর্থ হলেও তাঁকে আমরা সিস্টেমের মধ্যে রাখছি, যেমনটা জাকির বা জয়দের রেখেছি। ব্যর্থতা ক্রিকেটের অংশ। তবে সেখান থেকে উঠে আসার প্রক্রিয়ায় খেলোয়াড়ের নিজস্ব দায়বদ্ধতা থাকতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞ, তাঁদের একেবারে বাদ দেওয়ার সংস্কৃতিতে আমরা নেই। তাদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করাই হচ্ছে নির্বাচকদের দায়িত্ব।”

এদিকে দুই বছর পর ওয়ানডে দলে জায়গা পেয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার নাঈম শেখ। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ১১ ইনিংসে দুই শতকে ৬১৮ রান করে হয়েছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। জাতীয় দলে তাঁকে মূলত পারভেজ ইমন ও তানজিদ হাসানের বিকল্প ভাবনায় রাখা হয়েছে।

নাঈমের ইনক্লুশন নিয়ে গাজী আশরাফ বলেন, “আমরা যেটা চাইছি, সেটা হচ্ছে—উচ্চ স্ট্রাইক রেট ও ইতিবাচক ব্যাটিং মাইন্ডসেট। তানজিদ আর পারভেজ সেটা দিচ্ছে। নাঈমকে আমরা ওই মানসিকতা নিয়েই প্রস্তুত হতে বলেছিলাম, এবং দেখা যাচ্ছে সে সেটার জন্য কাজ করেছে। তার স্ট্রাইক রেট আগের তুলনায় অনেক ভালো।”

সব মিলিয়ে নির্বাচকদের ব্যাখ্যা হলো, ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মানে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া এবং দলের কৌশলগত প্রয়োজন মেটানো—দুটোই বিবেচনায় নেওয়া হয়। আর সে কারণেই বড় পারফরমার হয়েও এনামুল এই সিরিজে দলে নেই, আর উন্নতির ইঙ্গিত দিয়ে সুযোগ পেয়েছেন নাঈম।