রাজধানীতে ‘রহস্যজনক’ গর্ত, ‘সিঙ্কহোল’ দাবি

ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে হঠাৎ একটি ‘রহস্যজনক’ গর্তের সৃষ্টি হয়। প্রথমে ছোট গর্তের মতো মনে হলেও বিকেলের মধ্যে সেটি বড় আকার ধারণ করে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, গর্তটি ঘিরে স্থানীয় ও পথচারীদের ভিড়। গর্তের ভেতর দিয়ে ওয়াসার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ঘটনাস্থলে ওয়াসা বা অন্য কোনো প্রশাসনিক সংস্থার তৎপরতা শুরুতে দেখা যায়নি। পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বালু ও মাটি ফেলে গর্তটি রাতেই যান চলাচলের উপযোগী করে তোলে।

মঙ্গলবার রাতে বালু ও মাটি ফেলে গর্তটি ভরাট করা হয়।
এই গর্ত সৃষ্টির কারণ এখনো স্পষ্ট না হলেও, অনেকেই এটিকে ‘সিঙ্কহোল’ বলে দাবি করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই ঘটনা রাজধানীর রাস্তাগুলোর দুর্বল অবকাঠামো এবং নজরদারির অভাবকেই তুলে ধরেছে।
আসুন আগে জেনে নেই সিঙ্কহোল কী:
সিঙ্কহোল (Sinkhole) হচ্ছে ভূ-পৃষ্ঠে হঠাৎ করে সৃষ্টি হওয়া একটি গর্ত বা ফাটল, যা সাধারণত মাটি ধসে পড়ে তৈরি হয়। এটি প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট কারণে হতে পারে এবং এতে মাটি, পিচ বা কংক্রিট একেবারে নিচে দেবে যায়।
কীভাবে সিঙ্কহোল তৈরি হয়:
- ভূগর্ভস্থ খালি জায়গা: প্রাকৃতিকভাবে কিছু এলাকায় মাটির নিচে চুনাপাথর, ডোলোমাইট বা জিপসামের মতো দ্রবণীয় শিলা থাকে। বৃষ্টির পানি বা ভূগর্ভস্থ পানি এসব শিলাকে ধীরে ধীরে গলিয়ে ফেলে, ফলে নিচে ফাঁপা গহ্বর (void) তৈরি হয়।
- মাটির ওপর চাপ: ওপরের মাটি বা রাস্তা যখন এই ফাঁপা গহ্বরের ওপর পড়ে, তখন একসময় চাপ সইতে না পেরে ধসে পড়ে — এতে হঠাৎ বড় গর্ত বা সিঙ্কহোল দেখা দেয়।
সিঙ্কহোল হওয়ার কারণ
- প্রাকৃতিক কারণ:
১. ভূগর্ভস্থ শিলা দ্রবীভূত হওয়া
২. অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা বন্যা
৩. ভূমিকম্প বা কম্পন
৪. ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হঠাৎ কমে যাওয়া
- মানবসৃষ্ট কারণ:
১. অত্যধিক ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন
২. খননকাজ বা নির্মাণ কাজের ভুল পরিকল্পনা
৩. ভাঙা পানি সরবরাহ পাইপলাইন বা পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা
৪. খনির কাজ বা ভূগর্ভস্থ সুয়ারেজ লাইনের সমস্যা
সিঙ্কহোলের ঝুঁকি ও প্রভাব:
- ১. হঠাৎ সড়ক, ভবন বা গাড়ি ধসে যেতে পারে
- ২. বড় দুর্ঘটনা বা প্রাণহানির আশঙ্কা
- ৩. অবকাঠামোর ক্ষতি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি
কীভাবে সাবধান থাকবেন:
- ১. ফাটলধরা বা পানি জমে থাকা রাস্তায় ভারী যান না চালান।
- ২. হঠাৎ গর্ত বা ধস দেখলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করুন।
- ৩. পুরনো পাইপলাইন ও ড্রেন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
- ৪. নগর কর্তৃপক্ষের উচিত ভূগর্ভস্থ জরিপ ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিত করা।